মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি বরাদ্দে অনিয়ম

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি পাওয়ার কথা। প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে বাড়িগুলো নির্মাণের জন্য দরপত্রও চাওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, যেসব মুক্তিযোদ্ধার নামে বাড়িগুলো বরাদ্দ হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই বিত্তবান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় গফরগাঁওয়ের ১০ জন অসহায় মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে জানিয়ে তাঁদের নামের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়। এর ভিত্তিতে তালিকা তৈরির জন্য তৎকালীন ইউএনও রেজাউল বারী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. সেলিমসহ ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। পরে ওই কমিটি ১০ জন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। তালিকায় আনিছুর রহমান, মো. সেলিম, এ এস এম আবদুল অদুদ, মফিজ উদ্দিন, সলিম উল্লাহ মোস্তফা, আইয়ুব আলী, মমিন উদ্দিন, আসাদউল্লা লালু, আজিম উদ্দিন ও আবু সাঈদের নাম রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাড়ি বরাদ্দ পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার মফিজ উদ্দিন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। উপজেলার বারবাড়িয়া গ্রামে প্রায় ৭০ শতাংশ জমির ওপর তাঁর একটি বাড়ি রয়েছে। পৌর শহরে তাঁর রয়েছে প্রায় কোটি টাকার মূল্যের আরও একটি বাড়ি।
মো. সেলিম উপজেলার মশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থক। সলিম উল্লাহ মোস্তফা ও তাঁর স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। পৌর শহর ও উপজেলার লামকাইন গ্রামে দুটি বিলাসবহুল বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এ এস এম আবদুল অদুদ। পাইথল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আসাদুজ্জামান লালু কয়েক একর কৃষিজমির মালিক। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আইয়ুব আলী, আনিছুর রহমানসহ তিনজন এ কোটায় বাড়ি পাওয়া যোগ্য। বাকি দুজনের অবস্থাও মোটামুটি সচ্ছল।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি বাড়ির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে আট লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাড়িগুলো নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে দরপত্র চাওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, যাঁরা সরকারি দলের লোক, তাঁরা বিত্তবান হয়েও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রবাদ্দ করা বাড়িগুলো নিয়ে অন্যায় করছেন। সরকারের উচিত বিষয়টিতে নজর দেওয়া।
জানতে চাইলে মফিজ উদ্দিন জানান, নামের তালিকায় কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। তবে যাঁরা বাড়ি রবাদ্দ পেয়েছেন, তাঁরা কেউ বিত্তবান নন। হয়তো তাঁদের বংশধরেরা বিত্তবান হতে পারেন। মন্ত্রণালয় যদি মনে করে বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে, তাহলে তারা (মন্ত্রণালয়) তালিকা পরিবর্তন করতে পারে।
ইউএনও সিদ্ধার্থ শংকর কুণ্ডু জানান, এ তালিকা করার সময় তিনি ছিলেন না। কাজেই বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে এ ব্যাপারে কথা বলতে রেজাউল বারীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।