ফিরোজ মিয়া কলেজে পাঠদানে অচলাবস্থা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ফিরোজ মিয়া কলেজের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে শিক্ষকদের মতবিরোধে আট দিন ধরে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এ বিরোধে শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ছেন।
কলেজ সূত্র জানায়, কলেজটির অবস্থান আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পাশে। ১৯৯২ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফিরোজ মিয়া তাঁর নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুর বছর শিক্ষার্থী ছিল ১২৩ জন। চলতি শিক্ষাবর্ষে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজারে। বর্তমানে চারটি বিষয়ে সম্মান (অনার্স) কোর্স চালু আছে। এক বছর আগে থেকে হিসাব, ব্যবস্থাপনা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠাতার মতবিরোধ শুরু হয়। চলতি মাসে মতবিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়।
অধ্যক্ষের পক্ষ নেন ১১ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের দুই সদস্য ও শিক্ষকেরা। অন্যরা প্রতিষ্ঠাতার পক্ষে। কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি স্থানীয় সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা। ফিরোজ মিয়া প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সরকারি বেতন উত্তোলনের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সভাপতি স্বাক্ষর করলেও দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠাতা ও তাঁর অনুগত সদস্যরা স্বাক্ষর করেননি। এতে করে আগস্ট মাস থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা ব্যাংক থেকে বেতন উত্তোলন করতে পারছেন না। এ ঘটনার পর শিক্ষকদের আন্দোলন মাঠে গড়ায়। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁরা পাঠদান বর্জনের কর্মসূচি শুরু করেন। গত বৃহস্পতিবার শিক্ষকেরা কলেজের মাঠে সমাবেশ করেন।
সমাবেশ থেকে বলা হয়, কলেজে শিক্ষকদের মর্যাদা বলতে কিছু নেই। প্রতিষ্ঠাতা এক পরিবারের শাসন কায়েম করছেন। সদ্য গঠিত ১১ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে তাঁর পরিবারের ছয় সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ওই সদস্যরা পাঠদান ও সুষ্ঠু পরিচালনায় মনোযোগ না দিয়ে প্রতিষ্ঠাতার স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছেন। বিনা দরপত্রে তাঁর পরিবারের সদস্যরা উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠাতার ছেলে কামাল হোসেন প্রভাষক হিসেবে চাকরি করলেও একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন। সভাপতি ও অধ্যক্ষের বদলে ব্যাংক হিসাব নিয়ন্ত্রণ করছেন প্রতিষ্ঠাতা। এক কথায়, কলেজে এখন শৃঙ্খলা নেই।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপাধ্যক্ষ আহম্মদ উল্লাহ খন্দকার, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মিজানুর রহমান, শিক্ষক প্রতিনিধি শরীফুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান, খন্দকার মামুন অর রশিদ প্রমুখ।
এদিকে পাঠদান শুরুর দাবিতে গত শনিবার কলেজে এসে শিক্ষার্থীরা মিছিল করেন এবং প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। অপর পক্ষের কিছু শিক্ষার্থী অচলাবস্থার জন্য শিক্ষকদের দায়ী করে স্লোগান দেন। তবে অচলাবস্থা নিরসনে জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসমাইল হোসেন উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের নিয়ে কলেজে যান এবং শিক্ষকদের সঙ্গে সভা করেন। তাঁরা শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
গত রোববার কলেজে গিয়ে দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী এসেছেন। অধিকাংশ শিক্ষকই উপস্থিত, কিন্তু ক্লাস হয়নি। অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাতার অন্যায় কর্মকাণ্ডের সহযোগী হতে পারছি না। তাই প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এখন সরকারি বেতন উত্তোলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। শিক্ষকদের কষ্টে ও ভয়ে রেখে ভালো পাঠদান কখনোই সম্ভব নয়।’
ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘এক কথায় বলব, ধ্বংস করার জন্য কলেজ প্রতিষ্ঠা করিনি। সমস্যা হলো, শিক্ষকেরা নিয়মিত ক্লাস করান না। প্রাইভেট পড়ান। এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়েছি। এতে তাঁদের স্বার্থহানি হয়েছে। এ তাই শিক্ষকেরা আন্দোলন শুরু করেছেন।’