ধর্ষণের ঘটনা মিটমাটের চেষ্টা!

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় হাওরপারের এক দরিদ্র নারী (২৪) ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ধর্ষণের ঘটনায় মামলা না করতে ওই নারীকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। পাশাপাশি ঘটনাটি ২০ হাজার টাকায় মিটমাট করার চেষ্টা করা হয়। জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাক ইউনিয়নের হটামারা গ্রামের পাশের পাগাইয়া হাওর এলাকায় গত শুক্রবার রাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ দিকে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলা সদরে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
ধর্ষণের শিকার নারীর পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রের বিবরণ অনুযায়ী, স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর থেকে ওই নারী দিনমজুর বাবার পরিবারে থাকেন। শুক্রবার রাতে তাঁর মা-বাবা এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। রাতে তিনি শিশুকন্যাকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। গভীর রাতে পাগাইয়া হাওরের পাহারাদার নাসিরনগর গ্রামের শাহজাহান, গজারিয়া গ্রামের বাচ্চু, রাজীবনগর গ্রামের আবদুল মনাফ ও ফেনারবাক গ্রামের সাদেক মিয়া ওই ঘরে হানা দিয়ে তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যান। তাঁরা ওই নারীকে একই রাতে হাওরের খলাঘরে (পাহারাদারদের থাকার অস্থায়ী ঘর) আটকে রেখে ধর্ষণ করেন এবং ভোরে সুনামগঞ্জের একটি লঞ্চে তুলে দেন। গত শনিবার রাতে তিনি সুনামগঞ্জ থেকে জামালগঞ্জে ফিরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের বাড়িতে ওঠেন। গত রোববার সকালে তাঁর মা সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যান। এ নিয়ে গত সোমবার হটামারা গ্রামে সালিস হয়।
হটামারা গ্রামের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সালিসে ধর্ষকদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং তাঁদের মাথা ন্যাড়া করার রায় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই নারী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তা মেনে নেননি। হাওরের ইজারাদারেরা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় নারীটির পরিবারকে মামলা না করতে নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন।
সালিসে উপস্থিত ছিলেন হটামারা গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহিম। তিনি জানান, ওই নারীর পরিবার সালিসের রায় না মানায় বৈঠক বাতিল করা হয়। ধর্ষকেরা টাকা দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু মাথা ন্যাড়া করতে চাননি।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, গত মঙ্গলবার ওই নারী মামলা করতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সহসভাপতি ও ফেনারবাক ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু তালুকদার তাঁদের থানায় যেতে দেননি। রাতে তিনি ওই নারীর পরিবারকে দেওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা পাঠান গ্রামের মাতবর আবদুল হেকিমের কাছে। হেকিম টাকা নিয়ে গেলে ওই নারী টাকা নেননি।
হটামারা গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম জানান, রোববার রাতে ওই নারী সুনামগঞ্জ থেকে জামালগঞ্জে এসে তাঁর বাসায় ওঠেন। পরদিন সকালে তাঁর মা এসে তাঁকে নিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘এঁরা খুবই গরিব। ঘটনা পুরোপুরি সত্য, কিন্তু সাক্ষী দুর্বল। ঘটনাটি মিটমাট করার জন্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু তালুকদার চেষ্টা করছেন বলে শুনেছি। কিন্তু মেয়েটির পরিবার সেটা মানছে না।’ এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য করুণা সিন্ধু তালুকদারের মুঠোফোনে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক গতকাল দুপুরে বলেন, ‘ঘটনাটি আমাকে কেউ জানায়নি। জানলে আমরা অব্যশই ব্যবস্থা নিতাম। লোকমুখে শুনে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।’ ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বিকেলে উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এতে সংগঠনের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন অংশ নেন।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন সংগঠনের উপজেলা শাখার সভাপতি আয়েশা খানম, সহসভাপতি দীপশ্রী রানী তালুকদার, সাবেক ইউপি সদস্য খালেদা আক্তার প্রমুখ।