বানিয়াচংয়ে আনন্দ স্কুলের ৩১ লাখ টাকা আত্মসাৎ

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-উপকরণের প্রায় সাড়ে ৩১ লাখ টাকা লোপাট হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র সিনহা এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন শিক্ষক সম্প্রতি প্রকল্প পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্পের অধীনে আনন্দ স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রকল্পের সহকারী পরিচালক ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা শিক্ষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন। এ ছাড়া ১৭৩টি বিদ্যালয়ের ৭৫টি ভুয়া—এমন প্রমাণও পেয়েছেন তাঁরা। অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বানিয়াচং উপজেলার আনন্দ স্কুলে গত এপ্রিলে প্রথম সেমিস্টারের পাঁচ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থীর জন্য মোট ৩১ লাখ ৩২ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে। এ ছাড়া বিদ্যালয়প্রতি চার মাসের ভাড়া বাবদ ছয় হাজার ৪০০ টাকা, মেরামত বাবদ এক হাজার টাকা এবং শিক্ষকের চার মাসের বেতন বাবদ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষকদের ব্যাংক থেকে টাকা তুলে প্রত্যেক শিশুর জন্য পোশাক তৈরি করে ও উপকরণ কিনে দেওয়ার কথা। কিন্তু গত ২০ জুলাই সকালে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র সিনহা সব স্কুলের শিক্ষকদের উপজেলা শিক্ষক সমিতির হলরুমে ডেকে আনেন। এ সময় তিনি শিক্ষকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের পোশাক ও শিক্ষা-উপকরণ শিক্ষা কার্যালয়ের মাধ্যমে কেনা হবে। তিনি শিক্ষকদের ব্যাংক থেকে টাকা তুলে তাঁর কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। দু-একজন শিক্ষক প্রতিবাদ করায় তাঁদের চাকরি হারানোর ভয় দেখান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান, শিক্ষা কার্যালয়ে তাঁদের বেতন ওঠানোর চেকবই ও বিদ্যালয়ে সভার কার্যবিবরণী লেখার খাতা আটকে রাখা হয়। টাকা তুলে দেওয়ার পর এগুলো ফেরত দেন শিক্ষা কর্মকর্তা।
পরিমল চন্দ্র সিনহাকে গত ১৪ আগস্ট দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বদলি করা হয়। সম্প্রতি বানিয়াচং উপজেলার চন্দ্রিপুর, দৌলতপুর উত্তরপাড়া ও আড়িয়ামুগুর রায়পুর আনন্দ স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকলেও তাদের পরনে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাক নেই।
এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র সিনহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীদের পোশাক না কিনে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল। তাই নজরদারির জন্য আমি ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।’ বদলি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনিয়মের জন্য নয়, বরং জনস্বার্থে তাঁকে বদলি করা হয়েছে।
বানিয়াচং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে সদ্য যোগ দেওয়া মিহির লাল আচার্য বলেন, অনিয়মের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। কাগজপত্র এখনো খতিয়ে দেখেননি। এ ছাড়া বিদায়ী শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র তাঁকে আনন্দ স্কুলের হিসাব-নিকাশ এখনো বুঝিয়ে দেননি।