আনন্দ স্কুলের কোটি টাকা লুট!

‘রিচিং-আউট-অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক)’ প্রকল্পের অধীনে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় ৪৩৪টি আনন্দ স্কুলের পোশাক, শিক্ষা উপকরণ ও পরীক্ষার ফির প্রায় কোটি টাকার চেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষকদের কাছ থেকে জোর করে নিয়ে গেছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং আনন্দ স্কুল-সংশ্লিষ্ট একটি কমিটির সদস্যরা চেকের টাকা কৌশলে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কমিটির তিনজন সদস্যই ক্ষমতাসীন দলের নেতা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কখনো বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি বা ভর্তি হয়ে ঝরে পড়েছে হতদরিদ্র পরিবারের এমন শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য রস্ক প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম দেশের ১০০টি উপজেলায় চলছে। এর অধীনে পাটগ্রাম উপজেলায় ৪৩৪টি শিক্ষাকেন্দ্র (এলসি) আছে। এসব কেন্দ্রে একজন করে শিক্ষক আছেন। কোনো এলসিতে ৩০ জন, আবার কোনোটিতে ৩৫ জন শিক্ষার্থী আছে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।
প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, সম্প্রতি ৪৩৪ এলসির নামে সোনালী ব্যাংকের পাটগ্রাম শাখায় এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা জমা হয়। ৩৫ জন শিক্ষার্থী আছে এমন বিদ্যালয়ে পোশাক বাবদ ১৪ হাজার টাকা, পরীক্ষার ফি এক হাজার ৭৫০, উপকরণ চার হাজার ২০০, ঘর মেরামত এক হাজার, ঘর ভাড়া (চার মাস) এক হাজার ৬০০ ও শিক্ষকের বেতন (চার মাস) ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
আনন্দ স্কুলের সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয়ের জন্য গঠিত ১৮ সদস্যের উপজেলা শিক্ষা কমিটি ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় এ অনুদান সঠিকভাবে ব্যয় করা হচ্ছে কি না তা তদারকি করবে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পোশাক ও শিক্ষা উপকরণ নিশ্চিতকরণ কমিটি করে দিয়েছেন। এখন এ কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা চেক ভাঙিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পোশাক ও উপকরণ নিশ্চিতকরণ কমিটি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার স্টুডেন্ট কেয়ার গার্মেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পোশাক সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম জানান, তাঁরা প্রতি সেট পোশাক ২৪০ টাকায় পাটগ্রামের ৪৩৪টি আনন্দ স্কুলে সরবরাহ করেছেন। কারা এ টাকা পরিশোধ করেছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইউএনও, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও পোশাক নিশ্চিতকরণ কমিটি তাঁদের পোশাক সরবরাহ করতে বলেছেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি সেট পোশাকের জন্য দেওয়া হচ্ছে ২৪০ টাকা। অথচ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪০০ টাকা। বাকি ১৬০ টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
কমিটির সদস্য গোলাম খোরশেদ দাবি করেন, কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে অগ্রিম চেক নেওয়া হচ্ছে না। স্কুলের শিক্ষার্থীদের পোশাক ও উপকরণ নিশ্চিত করার পরই কেবল চেক নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষকেরা অভিযোগ করেন, ঈদুল ফিতরের আগে তাঁরা টাকা তুলতে গেলে সোনালী ব্যাংকের পাটগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক জানান, সিএমসির রেজুলেশনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সই নিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া তাঁরা চেকের টাকা দেবেন না।
শাখা ব্যবস্থাপক মোসলেম উদ্দিন দাবি করেন, শিক্ষা কর্মকর্তার সই ছাড়া চেকের টাকা দেওয়া যাবে না, এমন কথা তিনি বলেননি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফ আহম্মেদ বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা কমিটির অনুমোদন নিয়ে চেকের পাতা নিচ্ছি।’
উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চেক দেওয়ার ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কমিটির বৈঠকে কোনো আলোচনা বা অনুমোদন দেওয়া হয়নি।