সাক্ষাতের ব্যাপারে কিছু জানে না কামারুজ্জামানের পরিবার

মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল জানিয়েছেন, কারা কর্তৃপক্ষ এখনো তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাই বাবার (কামারুজ্জামান) সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারেও কিছু জানেন না তাঁরা।

আজ শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে হাসান ইকবাল প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন।

কামারুজ্জামানের ফাঁসি আজ কার্যকর করা হতে পারে। প্রাণভিক্ষার জন্য তিনি কোনো আবেদন করবেন না বলে জানানোর পর গতকাল শুক্রবার তাঁর ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি শুরু হয়। তবে কাল রাতে সব প্রস্তুতির পরও রায় কার্যকর করা হয়নি।

এ বিষয়ে গতকাল রাতে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামারুজ্জামানের ফাঁসি আজকে (শুক্রবার) হবে না, কালকে (শনিবার) হবে।’

সরকারি সূত্র জানায়, প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে গতকাল সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব জামিল ও তানভীর মোহাম্মদ আজিম।
ফাঁসির অপেক্ষা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদস্থ একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে কামারুজ্জামান বলেছেন, তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। কিন্তু দণ্ড কার্যকর করার জন্য তিনি আরও কিছু সময় চান। নিয়ম অনুসারে তিনি সাত দিন সময় পাবেন বলে দাবি করেন।

আজ সকাল ১০টার দিকে কামারুজ্জামানের মিরপুর ১১ নম্বরের কালশী রোডের বাসায় গিয়ে এক ধরনের নীরবতা দেখা যায়। এ সময় বাসার প্রধান ফটক খোলা ছিল। ছয় তলার ওই বাসা থেকে জানানো হয়, ভেতরে কোনো পুরুষ সদস্য নেই। বাসায় কামারুজ্জামানের স্ত্রী ও মেয়েরা আছেন। পরে কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবালের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। পুলিশি হয়রানির অভিযোগ তুলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই আমরা পুরুষ সদস্যরা বাসায় থাকছি না।’

কামারুজ্জামানের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসান ইকবাল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছু জানায়নি। তারা জানালে আমরা যাব।’

গত বুধবার সন্ধ্যায় কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ আদেশের কপি কারাগারে পৌঁছায়। কারা কর্তৃপক্ষ রায় পড়ে তাঁকে শোনায়। এরপর তাঁর কাছে জানতে চায় তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি না। কামারুজ্জামান এ ব্যাপারে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেন। সে অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর আইনজীবীরা কারাগারে দেখা করেন। পরে তাঁর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে তিনি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের কথা কারা কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।

এরপর গতকাল কামারুজ্জামানের কাছে প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে জানতে চান ম্যাজিস্ট্রেট।

একাত্তরে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে ১৪৪ জনকে হত্যা ও নারী নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে আসামিপক্ষ। গত বছরের ৩ নভেম্বর সোহাগপুর হত্যাকাণ্ডের দায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে ৫ মার্চ তা পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন কামারুজ্জামান। দুই দফা শুনানি পেছানোর পর গত রোববার আপিল বিভাগে ওই আবেদনের শুনানি হয়। ৬ এপ্রিল দেওয়া রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন।