হাইস্কুলের গণ্ডি পেরোননি ৭৬ জন

চট্টগ্রামে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ৭৬ জন হাইস্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। মামলা রয়েছে ৫৪ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে পাঁচজন খুনের মামলার আসামি। প্রার্থীদের ৭১ শতাংশই ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২১৩ জন। এর মধ্যে তিনজন নারী। হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এসএসসির সার্টিফিকেট না থাকা ৭৬ জনের মধ্যে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন দুজন, নবম শ্রেণি তিনজন, অষ্টম শ্রেণি ১৭ জন, সপ্তম শ্রেণি তিনজন, পঞ্চম শ্রেণি একজন, সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ২২ জন, ২৮ জন নিজেদের স্বশিক্ষিত দাবি করেছেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে ১৬ জনের, স্নাতক ৪০ জন, এইচএসসি বা সমমান ৩৮ জন, এসএসসি ৩৬ জন, একজনের রয়েছে ডিপ্লোমা ডিগ্রি। এর বাইরে ছয়জন প্রার্থী তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেননি।
বার্ষিক আয়ে এগিয়ে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইলিয়াছ। তাঁর আয় ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। পেশা হিসেবে তিনি আমদানি ও ঠিকাদারি উল্লেখ করেছেন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও পরিবহন ব্যবসায়ী দ্বীন মোহাম্মদ। তাঁর বার্ষিক আয় ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
বছরে ১০ লাখ টাকার ওপর আয় রয়েছে আরও ২৩ জনের। এর মধ্যে সাতজন গত নির্বাচনে জয়ী কাউন্সিলর প্রার্থী। এঁদের মধ্যে ছয়জনের আয় গতবারের তুলনায় বেড়েছে। তাঁরা হলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুল হক, ১৯ নম্বরের ইয়াছিন চৌধুরী, ২১ নম্বরের বিজয় কুমার চৌধুরী, ২৫ নম্বরের আবদুর সবুর লিটন, ২৮ নম্বরের নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও ৪০ নম্বরের আবদুল বারেক। গতবারের তুলনায় আয় কমেছে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল আবছারের।
৪০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল বারেক এবার হলফনামায় আয় দেখিয়েছেন ৩৬ লাখ টাকা। গত নির্বাচনে হলফনামায় তাঁর আয় দেখিয়েছিলেন ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর আয় বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। এ বিষয়ে আবদুল বারেক প্রথম আলোকে জানান, ‘তিনি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি সরবরাহ করেন। এ আয় বৈধ। এর সপক্ষে সব ধরনের কাগজ রয়েছে।’
পাঁচ বছরে সাড়ে তিন গুণ আয় বেড়েছে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরীর। গত নির্বাচনে তাঁর আয় ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এবার দেখিয়েছেন ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘গতবার নির্বাচনের আগে আমি সরকারি চাকরি করতাম। সে কারণে আয় কম ছিল। নির্বাচন করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। এখন আমি আবাসন ব্যবসায়ী। সে কারণে আয় বেড়েছে।’
১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ইয়াছিন চৌধুরী গত নির্বাচনে হলফনামায় কৃষি খাতে কোনো আয় দেখাননি। তবে এবার এ খাতে আয় দেখিয়েছেন ১৮ লাখ ৮২ হাজার ১৯৫ টাকা। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইয়াছিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৈতৃকসূত্রে পাওয়া জায়গা বিক্রি করায় আমার আয় বেড়েছে।’
প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে কম আয় উল্লেখ করেছেন ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ইয়াছিন রেজা। তাঁর বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২০ হাজার টাকা।
পেশার ঘরে মায়ের আয়ের ওপর নির্ভরশীল উল্লেখ করেছেন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. হামিদ। তিনি তাঁর মায়ের আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মিজানুর রহমান পেশা হিসেবে সংসার খরচ থেকে গচ্ছিত টাকা উল্লেখ করলেও আয়ের ঘরে কিছুই উল্লেখ করেননি।
মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন ২১ প্রার্থী। খুনের মামলা রয়েছে ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের প্রার্থী ও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মো. আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের, ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডের প্রার্থী ফয়েজউল্লাহ চৌধুরী, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের মিজানুর রহমান, ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের সরোয়ার আলম চৌধুরী ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল হুদা।
আবদুল কাদের ২৯টি মামলার মধ্যে ২৭টিতেই খালাস পেয়েছেন। ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের আলী আকবর ১৮টি মামলার ১৭টি থেকে খালাস ও অন্যটি থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হয়েছে।
সাত প্রার্থীর বিরুদ্ধে পাঁচের অধিক মামলা রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক, নাশকতা, ভাঙচুর ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলা রয়েছে।
১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল হালিম ওরফে শাহ আলমের বিরুদ্ধে বিচারাধীন রয়েছে ১৮টি মামলা। তিনি কারাগারে আছেন। পাঁচলাইশ থানা জামায়াতের আমির ও ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের প্রার্থী মুহাম্মদ শামসুজ্জামান হেলালীর বিরুদ্ধে ১৬টি এবং ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ও কাউন্সিলর প্রার্থী মাহফুজুল আলমের বিরুদ্ধে রয়েছে নয়টি মামলা। জামায়াতের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ও কাউন্সিলর প্রার্থী শফিউল আলমের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া খুলশী থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার সেলিমের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জমির আহমেদের বিরুদ্ধে পাঁচটি ও ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডের জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে।
মুহাম্মদ শামসুজ্জামান হেলালী দাবি করেন, জনগণ থেকে দূরে রাখতে এবং এলাকাছাড়া করতে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন ৪০ জন। এর মধ্যে ১৯ জনের বিরুদ্ধে এখনো বিভিন্ন মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আর সম্পূর্ণ খালাস বা অব্যাহতি পেয়েছেন ২১ প্রার্থী।
প্রার্থীদের মধ্যে ১২৮ জনের স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও যানবাহন রয়েছে ৪২ জনের। পরিবহন ঠিকাদার ও মোটর ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী এবং ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী দ্বীন মোহাম্মদের গাড়ি রয়েছে ১২টি। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে সবচেয়ে বেশি নগদ টাকা রয়েছে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর বাবুল হকের। তাঁর রয়েছে ২ কোটি ৭৯ লাখ ১২ হাজার ৬৮৪ টাকা। গত নির্বাচনের আগে তাঁর হাতে নগদ ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৯ টাকা।
এ বিষয়ে গত সোমবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে বাবুল হক বলেন, ‘হলফনামায় সম্পত্তির বিষয়ে আমার ছেলেরা ভালো বলতে পারবে।’