বকেয়া থাকায় ক্রয়কেন্দ্রে পাট দিতে অনাগ্রহ

পাওনা পরিশোধ না করায় চলতি মৌসুমে পাবনার বেড়া উপজেলার সরকারি পাট ক্রয়কেন্দ্রগুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বিক্রেতারা। গত বছর গুদামে পাট বিক্রির পাওনা টাকা না পেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিচ্ছেন বিক্রেতারা। এসব কারণে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রগুলোয় এবার পাট কেনায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন পাট ক্রয়কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বেড়ায় বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাভুক্ত লতিফ বাওয়ানি জুট মিলস লিমিটেডের দুটি এবং আমিন জুট মিলস লিমিটেড ও গুল আহমেদ জুট মিলস লিমিটেডের একটি করে পাট ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের ক্রয় মৌসুমে আমিন জুট মিলসের এক কোটি ১৭ লাখ টাকা ও গুল আহমেদ জুট মিলসের ৫২ লাখ টাকা বকেয়া থেকে যায়। বকেয়া মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা। চলতি মৌসুমে গত জুলাই থেকে সব কটি ক্রয়কেন্দ্রে পাট কেনা শুরু হয়।
এদিকে চলতি মৌসুমের পাওনা টাকাও ঠিকমতো পরিশোধ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি মৌসুমে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত আমিন জুট মিলসের বকেয়া পড়েছে দুই কোটি ১৩ লাখ টাকা, গুল আহমেদ জুট মিলসের দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা ও লতিফ বাওয়ানি জুট মিলসের পাঁচ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত বছর ও চলতি মৌসুমে ক্রয়কেন্দ্রগুলোয় মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকমতো বকেয়া শোধ না করায় ক্রয়কেন্দ্রগুলোয় পাট কেনা চলছে ধীরগতিতে। মূলধন আটকে যাওয়ার পাশাপাশি সময়মতো টাকা না পাওয়ার আশঙ্কায় পাট ব্যবসায়ীরা ক্রয়কেন্দ্রে পাট বিক্রি একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন। বেড়া ও করমজা বাজারের হাটবার হওয়া সত্ত্বেও মঙ্গলবার ক্রয়কেন্দ্রগুলোয় গিয়ে পাটের আমদানি একেবারেই কম লক্ষ করা গেছে।
ক্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গুল আহমেদ জুট মিলসের পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৪৭ হাজার ৫০০ মণ। মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা কিনেছে ১৮ হাজার মণ। অন্যান্য বছর এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ পাটই কেনা হয়ে যায়।
প্রায় একই অবস্থা আমিন জুট মিলসের। তবে গত বছরের বকেয়া না থাকায় লতিফ বাওয়ানি জুট মিলসের অবস্থা কিছুটা ভালো।
আমিন জুট মিলসের বেড়া কেন্দ্রের ক্রয় কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ‘গত বছরের বকেয়া থাকা সত্ত্বেও বিক্রেতাদের পাওনা শোধের আশ্বাস দিয়ে আমরা পাট কেনা শুরু করি। কিন্তু পাওনা শোধ করতে না পারায় বিক্রেতারা প্রতিনিয়ত আমাদের চাপ দিচ্ছেন।’
গুল আহমেদ জুট মিলসের পাট ক্রয় কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেন, ‘বিক্রেতাদের পাওনা ঠিকমতো শোধ করতে পারছি না বলে পাট কেনায় ধীরগতি দেখা দিয়েছে।’
বেড়া বাজারের পাট ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গুদামে পাট সরবরাহ করে চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে। মূলধন আটকে থাকায় ও টাকা ফেরত না পাওয়ায় আশঙ্কায় অনেক ব্যবসায়ীই গুদামে পাট দিচ্ছেন না।
ব্যবসায়ী রতন দাস বলেন, ‘বিভিন্নজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে পাটের ব্যবসায় লাগিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় পাওনাদারের ভয়ে দিন কাটছে। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে গাছতলায় দাঁড়ানোর দশা হয়েছে।’