নৌপথ বন্ধ করে মাছ চাষ

নৌপথ বন্ধ করে ব্রহ্মপুত্র নদে ঘের ও স্থায়ী জালের বেড় দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এ কারণে মেঘনার সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের সৃষ্টি হয়েছে বিচ্ছিন্নতা। স্বাভাবিক গতি হারিয়ে নদটি মরে যাচ্ছে l প্রথম আলো
নৌপথ বন্ধ করে ব্রহ্মপুত্র নদে ঘের ও স্থায়ী জালের বেড় দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এ কারণে মেঘনার সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের সৃষ্টি হয়েছে বিচ্ছিন্নতা। স্বাভাবিক গতি হারিয়ে নদটি মরে যাচ্ছে l প্রথম আলো

নরসিংদীর রায়পুরায় নৌপথ বন্ধ করে ব্রহ্মপুত্র নদে ঘের ও স্থায়ী জালের বেড় দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এ কারণে মেঘনার সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের সৃষ্টি হয়েছে বিচ্ছিন্নতা। স্বাভাবিক গতি হারিয়ে নদটি আরও মরে যাচ্ছে।
বিশেষ করে নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নরসিংদীর রায়পুরা, বেলাব এবং কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, কটিয়াদী ও মনোহরদী উপজেলার কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় কলেজছাত্র আহমেদ কামাল বলেন, কয়েক বছর আগেও নদটি দিয়ে লঞ্চ চলত। তারও আগে পালের নৌকার সারি চোখ থেকে সরত না। এখন কোষা নৌকাও চলে কষ্ট করে। কারণ ঘের ধরে রাখার জন্য পুরো নদে বাঁশ পুঁতে রাখা হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদটি ময়মনসিংহ হয়ে রায়পুরা এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার মধ্য দিয়ে মেঘনার সঙ্গে মিলেছে। একসময় এই নদের কল্যাণে দুই পাড়ের কৃষি ও মৎস্যনির্ভর অর্থনীতি বেশ সচল ছিল।
১৫ এপ্রিল মুছাপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদের পুরোটা জুড়ে ঘের ও বাঁশ পোঁতা। দুই কিলোমিটারের মধ্যে শতাধিক ঘের। ঘেরের কারণে কচুরিপানা আটকে আছে। ভৈরব প্রান্তে কয়েকটি ঘেরের পাশাপাশি জালের বেড় দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামনগর গ্রামের সিরাজ উদ্দিন, খুরশিদ মিয়া, জসিম উদ্দিন, ফুল মিয়া, অহিদুজ্জামান, শাহিন মিয়া, রুবেল মিয়া, কামাল উদ্দিন, ওসিন মিয়া, শাহ আলম, জলিল মিয়া, মমতাজ উদ্দিন, ছেতু মিয়া, আতাবুর রহমান, হাসান মিয়া, হাসিত উদ্দিন, বাচ্চু মিয়া, একেন আলী, মধু মিয়া, আফজাল হোসেন, কাওসার মিয়া, বাকী মিয়া ও আলী হোসেন ব্রহ্মপুত্রের প্রবেশদ্বারে ঘের দিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। তাঁরা প্রত্যেকে এক বা একাধিক ঘেরের মালিক। ভৈরব প্রান্তে শিশু মিয়া, মজিবুর রহমান, স্বপন মিয়া, সোহরাব হোসেন, সুজন মিয়া, মো. রবিন, বারিক মিয়া, মো. ছাত্তার ও নূর হোসেন একই কায়দায় ব্রহ্মপুত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং বেশির ভাগ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী।
কথা হয় ঘেরমালিক রামনগর গ্রামের হাসান মিয়ার সঙ্গে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি তাঁর ঘের পরিচর্যা করছিলেন।
ঘেরের কারণে নদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নে তাঁর কাছ থেকে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। নৌপথ বন্ধ করে ফেলার ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য হলো, অন্যরা করছে এই জন্য তিনিও করেছেন।
রামনগর গ্রামের নদপাড়ে সফিক মিয়ার চায়ের দোকান। সেখানে দেখা হয় ঘেরমালিক সিরাজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি দুটি ঘেরের মালিক। তিনি স্বীকার করেন, কয়েক বছর আগেও ব্রহ্মপুত্রের এই স্থানে বাঁশ ফেললে স্রোতে বাঁশ কাঁপত। ধরে রাখা যেত না।
সিরাজ মিয়া বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্রে পানি নাই, বুইনজ্জা গেছেগা। আমরা কী করুম।’

নদের পুরোটা জুড়ে ঘের ও বাঁশ পোঁতা। ঘেরের কারণে কচুরিপানা আটকে আছে। ফ​েল নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে l প্রথম আলো
নদের পুরোটা জুড়ে ঘের ও বাঁশ পোঁতা। ঘেরের কারণে কচুরিপানা আটকে আছে। ফ​েল নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে l প্রথম আলো


ঘেরমালিক আফজাল হোসেন ও কাওসার মিয়া স্বীকার করেন, নদের পুরোটা জুড়ে ঘেরের কারণেই বর্ষায়ও নৌপথ বন্ধ হয়েছে। এখন এই নদের পানির গভীরতা সাড়ে পাঁচ ফুটের বেশি হচ্ছে না।
ভৈরব প্রান্তে গিয়ে কথা হয় নূর হোসেনের সঙ্গে। তিনি জালের স্থায়ী বেড় দিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। মৎস্য বিভাগের অনুমতি আছে কি না—এমন প্রশ্নে নূর হোসেন বলেন, ‘কারওই নাই, আমারও নাই।’ নূর হোসেন ভৈরব পৌর শহরের জগন্নাথপুর মহল্লার বাসিন্দা।
ভৈরব উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনির উদ্দিন আইন জানান, নৌপথ বন্ধ করে মাছ চাষের সুযোগ নেই। প্রতিকারে উদ্যোগ নেবেন কি না—এমন প্রশ্নে তিনি কথা বলতে বিব্রতবোধ করেন।
একই প্রশ্নে রায়পুরা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদ কামাল বলেন, রায়পুরায় তাঁর যোগদানের বয়স মাত্র ১৫ দিন। এ কারণে সবকিছু তাঁর কাছে স্পষ্ট না। তবে এমনটা হলে বড় ধরনের অন্যায়। তিনি তা দেখবেন বলে জানান।