কাজ না করেই ৫৮ মেট্রিক টন গম-চাল আত্মসাৎ

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নের করাতি গ্রামে টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্পের ২৩ মেট্রিক টন গম ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের ৩৫ মেট্রিক টন চাল কাজ না করেই আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে করাতি গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল আলম খান এলাকাবাসীর পক্ষে ৭ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ দিলারা বেগম ২০১৪-১৫ অর্থবছরে করাতি গ্রামে ১২টি টিআর প্রকল্পের অনুকূলে ওই ২৩ মেট্রিক টন গম ও একটি কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেন।
অভিযোগ উঠেছে, সাংসদ দিলারার মেয়ের ভাশুর করাতি গ্রামের বাসিন্দা তৌফিকুজ্জামান খান ১৩টি প্রকল্পের দুটিতে নিজে সভাপতি হন ও অন্যান্য প্রকল্পে তাঁর আত্মীয়স্বজনদের সভাপতি করেন। তাঁরা কাজ না করেই ওই গম-চাল উত্তোলন করেছেন।
এ ব্যাপারে সাংসদ দিলারা বলেন, টিআর-কাবিখা প্রকল্পে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, টিআরের আওতায় বিরামপুর সেতু থেকে মুচিবাড়ি রাস্তায় দুই মেট্রিক টন একই রাস্তায় মুচিবাড়ি থেকে কুবাদিয়া সেতু পর্যন্ত দুই মেট্রিক টন গম বরাদ্দ করা হয়। প্রকল্প দুটি তাড়াইল-করিমগঞ্জ সড়কের অংশ। এই সড়কে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঠিকাদার উন্নয়নকাজ চলছে। প্রকল্প দুটির সভাপতি বিপুল সরকার বলেন, ‘আমি সভাপতি এটা সত্য। তবে সবকিছু করছেন তৌফিকুজ্জামান।’
সরেজমিনে দেখা যায়, করাতি উত্তরপাড়া জামে মসজিদের উন্নয়নে প্রকল্পের দুই মেট্রিক টন গম ও দক্ষিণপাড়া সেতু থেকে আতিকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার জন্য দুই মেট্রিক টন গম তোলা হলেও কোনো কাজ হয়নি। এ ছাড়া পশ্চিমপাড়া গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির রাস্তা উন্নয়ন, করাতি আফরোজ খানের বাড়ি থেকে রোকন উদ্দিনের বাড়ির রাস্তা, করাতি রমুজ মিয়ার রাইস মিল থেকে সাদেকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা, সাদেকের বাড়ি থেকে ঈদগাহ রাস্তা, বন্দের বাড়ি থেকে বিরামপুর রাস্তা, করাতি মক্তবের সামনের মাটি ভরাট ও করাতি ঈদগাহ মাঠে মাটি ভরাট প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি। টিআরের আওতায় শুধু করাতি দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদে একটি অজুখানা নির্মাণ করা হয়েছে।
৩৫ মেট্রিক টন কাবিখার প্রকল্পে করাতি কবরস্থানের এক-তৃতীয়াংশে মাটি ভরাট ও সীমানাপ্রাচীরের অর্ধেকের মতো কাজ হয়েছে। করাতি গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ও বিল্লাল মিয়া জানান, তাঁরা কবরস্থান উন্নয়নে কবরস্থানের গাছ বিক্রির এক লাখ টাকা ও গ্রামবাসীর অনুদানের দেড় লাখ টাকা তৌফিকুজ্জামানকে দিয়েছেন। তবে কাবিখার এই প্রকল্প ও টিআরের করাতি উত্তরপাড়া জামে মসজিদ উন্নয়ন প্রকল্পের সভাপতি তৌফিকুজ্জামান খান মুঠোফোনে বলেন, ‘সবকটি প্রকল্পে শতভাগ কাজ হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। আপনার প্রয়োজন থাকলে আমার সঙ্গে দেখা করবেন।’
করাতি ঈদগাহ মাঠে মাটি ভরাট প্রকল্পের সভাপতি তৌফিকুজ্জামানের চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলাম। কাজ না করেই কীভাবে গম উত্তোলন করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তৌফিক ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলুন। করাতি রমুজ মিয়ার বাড়ি থেকে সাদেকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পের সভাপতি তৌফিকের চাচা রমিজ উদ্দিন। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনিও তৌফিকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। একই ধরনের কথা জানান, কাজ না করে গম উত্তোলনকারী (করাতি দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ ব্যতীত) সবকটি টিআর প্রকল্পের সভাপতিরা।
অভিযোগকারী রফিকুল আলম খান বলেন, সাংসদ দিলারার আত্মীয়তার সুবাদে তৌফিকুজ্জামান ৫৮ মেট্রিক টন গম-চাল লুটপাটের মহোৎসবে নেমেছেন।
পিআইও সারোয়ার আলম জানান, টিআর ও কাবিখার প্রকল্পের সব গম-চাল ছাড় করা হয়েছে। কাজের কোনো অসংগতি পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও রাবেয়া বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য পিআইওকে নির্দেশ দিয়েছি।’