বন্দরের 'সচল' যন্ত্র ঠিক করতে দরপত্র

ছয়টি যন্ত্রের মধ্যে পাঁচটিই সচল। একটি যন্ত্রের শুধু ইঞ্জিনে সমস্যা। সব যন্ত্রই ২০০১ সালে কেনা হয়েছিল সাড়ে ১৮ কোটি টাকায়, যার অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ছিল ১২ বছর। মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন যন্ত্রাংশ পাল্টে ও রং করার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে বন্দর। এই কাজে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় ২২ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছে ধরেছে বলে জানা গেছে। কনটেইনার ওঠানো-নামানোর এ যন্ত্রের নাম স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার।
গত ৩১ মার্চ পত্রিকায় এসব যন্ত্র ‘রিফারবিশমেন্ট’ বা পুনঃসংস্কারের দরপত্র আহ্বান করা হয়। আজ ৩০ এপ্রিল এই দরপত্র খোলা হবে।
বন্দরের প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, রিফারবিশমেন্ট হলো প্রস্তুতকারক কোম্পানির ওয়ার্কশপে নিয়ে নির্ধারিত যন্ত্রের যন্ত্রাংশ পাল্টে নতুন যন্ত্রের রূপ দেওয়া। তবে দরপত্রে রিফারবিশমেন্ট বলা হলেও কার্যত কিছু যন্ত্রাংশ পাল্টানোর কথা বলা হয়েছে। এটি চট্টগ্রাম বন্দরেই করা হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের যন্ত্রপাতির প্রতিদিনের অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদনে কোন যন্ত্রটি সচল বা ত্রুটিযুক্ত তা উল্লেখ করা থাকে। গত এক সপ্তাহের কয়েকটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, দরপত্র আহ্বান করা ছয়টি যন্ত্রের মধ্যে পাঁচটিই (নম্বর ১১১, ১১২, ১২০, ১২৩ ও ১২৫) সচল রয়েছে বলে উল্লেখ আছে। শুধু ১১৪ নম্বর স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ারটি ইঞ্জিনে সমস্যার কারণে ব্যবহার হচ্ছে না। আগামী ১৫ মের মধ্যে এটি সচল হবে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
এর পরও কেন দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, তা জানতে বন্দরের সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর জুলফিকার আজিজের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এ বিষয়ে কোনো আলাপ করতে পারবেন না বলে এই প্রতিবেদককে জানান।
এ বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্দরে যন্ত্রপাতির স্বল্পতা আছে। এ অবস্থায় নতুন যন্ত্রপাতি কেনা সময়সাপেক্ষ বিষয়। বরং রিফারবিশমেন্ট করে অন্তত ৫০ শতাংশ বা ছয় বছর এসব যন্ত্রপাতির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল বাড়ানো যায়। প্রকৌশল বিভাগ থেকে এমন পরামর্শ দেওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
জানা গেছে, উম্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলেও স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ারের প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কালমার (বর্তমানে কার্গোটেক অধিগ্রহণ করেছে) এর মনোনীত প্রতিনিধিই অর্থাৎ একটি প্রতিষ্ঠানই শুধু এই যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে পারবে বলে দরপত্রে উল্লেখ করা হয়। অথচ ক্রয়বিধি অনুযায়ী, উন্মুক্ত দরপত্রে কোনো পণ্যের প্রতিষ্ঠানের নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা যাবে না।
দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, যন্ত্র হস্তান্তরের এক বছরের মধ্যে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে সেই যন্ত্রাংশ মেরামত করতে হবে সরবরাহকারীকে। এরপর বন্দরকেই দায় নিতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্দরের একজন কর্মকর্তা জানান, যে টাকা খরচ করে ছয়টি যন্ত্র পুনঃসংস্কার করা হচ্ছে, সেই টাকায় একই ধরনের তিনটি নতুন যন্ত্র কেনা সম্ভব।
তিনগুণ বেশি খরচ ধরে প্রাক্কলন: বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, ২০১০ সালে দরপত্রের মাধ্যমে স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ারের একটি ইঞ্জিন কিনেছে ২০ লাখ ২০ হাজার ৫৬৭ টাকায়। এখন নতুন দরপত্রে একটি ইঞ্জিনের জন্য বন্দর খরচ ধরেছে ৬৫ লাখ টাকা। ছয়টি যন্ত্রের জন্য ১২টি ইঞ্জিন বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
আবার প্রতিটি যন্ত্রে ইঞ্জিন ও ট্রান্সমিশন খুলে লাগানোর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া পুরোনো যন্ত্রাংশ খুলে নতুন যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন, চালু ও পরীক্ষার জন্য প্রতিটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা করে। এভাবে প্রতিটি যন্ত্রের জন্য খরচ ধরা হয় মোট ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ছয়টি যন্ত্র মিলিয়ে খরচ ধরা হয়েছে ২২ কোটি ২ লাখ টাকা।