ছাত্রলীগের ঐক্য 'উধাও', আবার উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা

সিটি নির্বাচনের এক দিন পরেই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শুরু হওয়া সংঘর্ষের রেশ কাটেনি এখনো। এ কারণে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি। তবে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে এবার কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে এক মাস ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ কারণে এপ্রিল মাসজুড়েই শান্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তবে নির্বাচন শেষ হতে না হতেই তাঁদের সেই ঐক্য উধাও।
গত বৃহস্পতিবার সামান্য কথা–কাটাকাটির জের ধরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ হলো শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সংগঠন সিক্সটি নাইন ও বাংলার মুখ। দুটি পক্ষই চট্টগ্রামের নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। এ সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল খায়েরসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। সংঘর্ষের পর দুই পক্ষই এখন শাহ আমানত হলে অবস্থান নিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিক্সটি নাইন পক্ষের নেতা আবু কাইজার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাছির ভাই নির্দেশ দিয়েছেন বিষয়টি দ্রুত সমাধান করে নিতে। দুই পক্ষের জ্যেষ্ঠ নেতারা বসে শিগরিই বিষয়টি মীমাংসা করবেন।’
তবে বাংলার মুখ পক্ষের নেতা মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘সংঘর্ষে আমাদের পক্ষের সাত-আটজন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা মামলা করেছেন। আগে বিষয়টির আইনগত সমাধান হোক। তারপর মীমাংসায় যাব।’
ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে অতীতের নানা সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন বেশির ভাগ কমিটিই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এর ফলে চিহ্নিত করা যায়নি সংঘর্ষের কারণ ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের।
এদিকে এক সপ্তাহের মধ্যে ক্যাম্পাসে প্রবেশের কথা রয়েছে প্রায় পাঁচ মাস ধরে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা ছাত্রলীগের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক আরেকটি পক্ষ ভার্সিটি এক্সপ্রেস। এই পক্ষের নেতা–কর্মীরা আগে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। সম্প্রতি তাঁরা নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের পক্ষে যোগ দেন বলে জানা গেছে।
এই পক্ষের নেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রায় ১৬০ জন শিক্ষার্থী পাঁচ মাস ধরে ক্যাম্পাসে যেতে পারছি না। এ ব্যাপারে ১ মে আমরা নাছির ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলি। তিনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমাদের ক্যাম্পাসে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’
তবে তাঁদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগপক্ষের নেতা–কর্মীরা। ফলে আবারও সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সিএফসিপক্ষের নেতা মামুনুল হক বলেন, ‘তাপস হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা আশা করব, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কোনো আওয়ামী লীগ নেতাই এসব খুনিকে রাজনীতি করার সুযোগ দেবেন না।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ছয় বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে আট থেকে দশটি সংঘর্ষ হলেও বাকিগুলো ছিল ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনা। নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও নানা বিতর্কে ক্ষুব্ধ হয়ে গত বছরের ১০ জুন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদ। তবে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করার পরও থামেনি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এর পরও গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ভার্সিটি এক্সপ্রেস এবং সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ পক্ষের সংঘর্ষে ছাত্রলীগ কর্মী তাপস সরকার খুন হন।
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ভিএক্সসহ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগে আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী আটটি পক্ষ রয়েছে। নাছিরের অনুসারী অন্য পক্ষগুলো হলো কনকর্ড-ইউরেকা, একাকার, সিক্সটি নাইন, এক নম্বর গেট ছাত্রলীগ, উল্কা ও এফিটাপ। অন্যদিকে সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ এক হয়ে বিজয় নামের নতুন পক্ষ তৈরি করেছে। এই পক্ষের নেতা-কর্মীরা মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী।
এদিকে সংঘর্ষ হলে এবার থেকে পুলিশ কঠোর হবে বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, ‘এবার থেকে অপ্রীতিকর ঘটনায় যে বা যারা জড়িত থাকবে তাদের আটক করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনা আর বরদাশত করা হবে না। এবার থেকে কাউকেই আর ছাড় নয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’