হুমকিতে সোনাহাট সেতু

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট সেতুর পূর্ব পাড়ের সংযোগ সড়কের মাটি ধসে পড়েছে। এ কারণে এর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন l ছবি: প্রথম আলো
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট সেতুর পূর্ব পাড়ের সংযোগ সড়কের মাটি ধসে পড়েছে। এ কারণে এর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন l ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ৭৬ বছরের পুরোনো সোনাহাট লোহার সেতুর ওপরের বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট ছিদ্রের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এক পাশের সংযোগের সড়কের মাটি ধসে পড়ছে। অতিরিক্ত ওজনের কয়লা ও পাথরবোঝাই ট্রাক চলাচল এবং দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেতুটির এ অবস্থা হয়েছে ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুড়িগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ গড়ে তুলতে দুধকুমার নদের ওপর সেতুটি তৈরি করা হয়। এর দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী বোমা মেরে এর একটি অংশ উড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর তৎকালীন সরকার স্টিলের পাত বসিয়ে সেতুটি মেরামত করে সড়ক যোগাযোগ চালু করে।
সওজ সূত্রে আরও জানা গেছে, মাস ছয়েক আগে সোনাহাট স্থলবন্দর চালু হওয়ার পর আমদানিকারকেরা ভারতের আসাম ও নাগাল্যান্ড থেকে আনা কয়লা ও পাথর ওই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। যানবাহনও এ সেতুর ওপর দিয়েই চলাচল করে। ট্রাক ছাড়াও নদের পূর্ব পারের সোনাহাট, হলদিয়া, বল্লভের খাস, কচাকাটা ও কেদার নামক পাঁচটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে জেলা ও উপজেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করছেন। এ সেতুটি ছাড়া তাঁদের যোগাযোগের আর কোনো মাধ্যম নেই। সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে আসা কয়লা ও পাথরবোঝাই ট্রাক চলাচল করায় সেতুর অবস্থা এখন আরও নাজুক হয়ে গেছে। এ ছাড়া গত বর্ষায় উজানের তীব্র স্রোতে সেতুর পূর্ব পাড়ের সংযোগ সড়কে ভাঙন দেখা দেয়। তখন তাৎক্ষণিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সওজ বালুর বস্তা ফেলে ওই ভাঙন রোধ করে। কিন্তু এখনো সংযোগ সড়কের মাটি ধসে পড়ছে। তাই সেতুটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সওজ এবং স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন সেতু মুখের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানালেও এ পথেই চলাচল করছেন ট্রাকচালক, ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে জোড়াতালি দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখা হয়েছে। দুধকুমার নদের স্রোত উত্তর থেকে ধনুকের মতো বেঁকে এসে সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কে আঘাত হানছে।
সেতুসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এটা আগে আসলে রেল যোগাযোগ সেতু ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর আবার যখন এটি চালু করা হয়। তারপর থেকে আর সংস্কার করা হয়নি। সংযোগ সড়কে কিছু জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে মাত্র। এখন নদে স্রোত কম। কিন্তু আগামী বর্ষায় সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে যেতে পারে।’
স্থলবন্দর শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৮০টি কয়লার ট্রাক এ সেতু দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। কোনো ট্রাক যেন পাঁচ টনের বেশি কয়লা নিয়ে এবং এক সঙ্গে একাধিক ট্রাক সেতুতে না ওঠে সে জন্য সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। কিন্তু সতর্কতার বার্তা উপেক্ষা করে আট-দশ টন ওজনের কয়লা নিয়ে ট্রাক চলাচল করছে। এতে যেকোনো সময় সেতুটি ধসে পড়তে পারে। এতে সোনাহাট স্থলবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সোনাহাট স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তারিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সরদার রাকিব আহমেদ জানান, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ। সেতুটি সংস্কারের জন্য তাঁরা উপজেলা ও জেলা প্রশাসন এবং সেতু বিভাগে আবেদন পাঠিয়েছেন।
কুড়িগ্রাম সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক জানায়, সেতুর দুই পাড়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এই সেতুটি নির্মাণে ২৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।