বাংলা গৌরবের ভাষা

টাঙ্গাইলে ভাষা প্রতিযোগের প্রশ্নোত্তর পর্বে গতকাল প্রশ্ন করছে এক শিক্ষার্থী l
টাঙ্গাইলে ভাষা প্রতিযোগের প্রশ্নোত্তর পর্বে গতকাল প্রশ্ন করছে এক শিক্ষার্থী l

উৎসব শুরু হবে সকাল নয়টায়। ঘড়ির কাঁটা তখনো আটটার ঘরে পৌঁছায়নি। এর মধ্যেই শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে। সাড়ে আটটার মধ্যে টাঙ্গাইল বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল গতকাল টাঙ্গাইল অঞ্চলের এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগে। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের উদ্দীপ্ত করে তোলে।
বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে এবং ভাষা প্রতিযোগের পতাকা উত্তোলন করেন অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। পরে বেলুন উড়িয়ে আনন্দ মোহন দে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ভাষা প্রতিযোগের মতো এ ধরনের উৎসব শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে। এর মধ্য দিয়ে শুদ্ধ বাংলা চর্চা হবে এবং বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হবে। অপসংস্কৃতির আগ্রাসন ও বিকৃতির হাত থেকে বাংলা ভাষা রক্ষা পাবে।
উদ্বোধনের পর চারটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ৪০ মিনিটের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে উৎসব প্যান্ডেলে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। নানা ধরনের বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন আসতে থাকে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে। শিক্ষার্থীদের এসব প্রশ্নের উত্তর দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ সিকদার, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ভাষা প্রতিযোগের সমন্বয়ক তারিক মনজুর, সহযোগী অধ্যাপক গুলশান আরা, হোসনে আরা, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এইচএসবিসির করপোরেট সাসটেইনেবিলিটি ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল জুবায়ের। শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর পর্বটি যখন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে, ঠিক সেই সময়ে উৎসবস্থলে এসে পৌঁছান সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানায়। তাঁর উপস্থিতিতে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা।

সৈয়দ শামসুল হক কথা বলে শিক্ষার্থীদের উদ্দীপ্ত করেন
সৈয়দ শামসুল হক কথা বলে শিক্ষার্থীদের উদ্দীপ্ত করেন

সৈয়দ শামসুল হক শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তোমরাই আগামী দিনের দেশ ও সমাজের পরিচালক, তোমাদের হাতেই যাবে প্রতিটি ক্ষেত্রের নেতৃত্ব। তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক ভাষা আছে। এর মধ্যে বড় ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকার করা হয়। কারণ, ৪০ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। বাংলাদেশ গৌরবের দেশ, বাংলা গৌরবের ভাষা। যে যেখানেই যাও, বাংলাকে অবলম্বন করতে হবে। পরে সৈয়দ শামসুল হক তাঁর দুটি কবিতা আবৃত্তি করে শোনান।
সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘ভাষা একমাত্র মানুষেরই আছে। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি, তাই বাঙালি। মানুষ হয়ে ওঠার জন্য ভাষা জানতে হবে। পৃথিবীর যেখানেই যে ছড়িয়ে যাও, বাংলা ভাষা নিয়ে ছড়িয়ে যেয়ো।’
অনুষ্ঠানে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা বিউটি সংগীত পরিবেশন করেন। দুপুরে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হয়। আঞ্চলিক পর্বের এই উৎসবে চার বিভাগের প্রতিটি বিভাগ থেকে ১৫ জন করে মোট ৬০ জন শিক্ষার্থীকে ভাষা প্রতিযোগের জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়। চার বিভাগে সেরাদের মধ্যে সেরা হয়েছে জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া হোসাইন।
উৎসবে টাঙ্গাইল বন্ধুসভা এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সদস্যরা সার্বিক সহায়তা করেন।