মরে যাচ্ছে উখিয়ার খাল-ছড়া

শুকিয়ে গেছে উখিয়ার অন্যতম প্রধান জলধারা রেজু খাল। শুকনো খাল থেকে তোলা হচ্ছে বালু l প্রথম আলো
শুকিয়ে গেছে উখিয়ার অন্যতম প্রধান জলধারা রেজু খাল। শুকনো খাল থেকে তোলা হচ্ছে বালু l প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার খাল-ছড়া মরে যাচ্ছে। অধিকাংশ খালে এখন পানি নেই। এ কারণে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদে সেচসংকটে পড়ছেন কৃষকেরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উখিয়ার প্রধান রেজু খালেই পানি নেই। কিছু স্থানে খাল থেকে বালু তোলা হচ্ছে। প্রায় ১৫ কিলোমিটারের এই খাল থেকে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা গেছে বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী, মনখালী, ছোয়াংখালী ও ইনানীতে। সেখানেও একই অবস্থা। অন্যদিকে মরিচ্যা, গুরাইয়ার দ্বীপ, পাইন্যাশিয়া, ধুরমখালী, বড়বিল, পাতাবাড়ী, থিমছড়ি, ভালুকিয়া, গয়ালমারা, চাকবৈঠা, ডেইলপাড়া, ডিগলিয়া, টাইপালং, হিজলিয়া, দোছড়ি, হরিণমারা খাল-ছড়ায়ও এখন ধু ধু বালুচর।
ডিগলিয়া গ্রামের কৃষক সোনা মিয়া জানান, খাল-ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে সেচসংকটে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। বেকার হয়ে পড়েছে খালের পাশে অন্তত ৫০ গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ, যাদের জীবিকা ছিল মাছ ধরা। মূলত পাহাড় কাটার মাটিতে সব খাল ভরাট হয়ে গেছে। এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি পাথর সংগ্রহের জন্য পাহাড় কেটে শেষ করে ফেলছেন। এতে বনাঞ্চলও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
বালুখালী গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, গ্রীষ্মকালে খালগুলো শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হলেও বর্ষার তা অন্য রূপ ধারণ করে। পাহাড়ি ঢলের পানি ধরে রাখতে না পেরে খালগুলোর দুই তীরের হাজার হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। তখন মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যায়।
হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া চৌধুরী (৭৫) জানান, ২০-২৫ বছর আগে এসব খালের গড় গভীরতা ছিল ৩০ থেকে ৩৫ ফুটের মতো। এখন চার থেকে আট ফুট। কোনো কোনো খাল ভরাট হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। এসব দেখার কেউ নেই।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দস্যুতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলায় উখিয়ার অসংখ্য খাল-ছড়া, প্রাকৃতিক জলাধার বিলুপ্তির পথে। এসব ছড়া ও খাল সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণের কেউ না থাকায় দখল–বেদখলের ঘটনা বাড়ছে। এ ব্যাপারে সামাজিক আন্দোলন দরকার।
উখিয়ার কৃষি কর্মকর্তা শংকর কুমার মজুমদার জানান, খাল-ছড়াগুলোর এ অবস্থার কারণে শুষ্ক মৌসুমে এখানে বোরো চাষাবাদসহ নানা শাক-সবজি চাষে কৃষকদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভরাট খাল-ছড়াগুলোর দ্রুত সংস্কার জরুরি।