অন্ধকার দূর করতে 'বোতল বাতি'

প্লাস্টিকের বোতলে পানি ও ক্লোরিন মিশিয়ে ‘বোতল বাতি’ তৈরি করছেন লাইটস ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরা। তৈরি হওয়া বাতি লাগানো হচ্ছে টিনের চালে l প্রথম আলো
প্লাস্টিকের বোতলে পানি ও ক্লোরিন মিশিয়ে ‘বোতল বাতি’ তৈরি করছেন লাইটস ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরা। তৈরি হওয়া বাতি লাগানো হচ্ছে টিনের চালে l প্রথম আলো

স্বচ্ছ বোতলে পানির সঙ্গে মেশানো হয় ক্লোরিন। টিনের চাল ফুটো করে বোতলটি স্থাপন করলেই ঘর হয় আলোকিত। পাওয়া যায় ৫০ থেকে ৬০ ওয়াটের বাতির সমান আলো। এমন প্রযুক্তির বিদ্যুৎবিহীন ‘বোতল বাতি’ দেশের কয়েকটি স্থানে ব্যবহৃত হলেও চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে এই প্রথম।
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণদের সামাজিক সংগঠন লাইটস ফাউন্ডেশন বোতল বাতি জনপ্রিয় করতে ফটিকছড়ি উপজেলায় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। উপজেলার বেশ কিছু পরিবারকে বিনা মূল্যে এই বাতি সরবরাহও করেছে সংগঠনটি। লাইটস ফাউন্ডেশনের কয়েকজন সদস্য জানান, স্বচ্ছ বোতলের ক্লোরিনমিশ্রিত পানি সূর্যের আলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করে আলো তৈরি করে। ব্রাজিলের উদ্ভাবক আলফ্রেদো এই প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন। এটি ব্যবহার করে খুব কম খরচে আলো পেতে পারে দরিদ্র লোকজন। যেসব ঘরে টিনের চাল আছে, সেসব ঘরে সহজেই এটি স্থাপন করা সম্ভব।

ঘর আলোকিত করা সাশ্রয়ী ‘বোতল বাতি’
ঘর আলোকিত করা সাশ্রয়ী ‘বোতল বাতি’


সূর্যের আলো এই বাতির চালিকা শক্তি বলে কেবল দিনের বেলায়ই জ্বলে বোতল বাতি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দিনের বেলায় কম আলো ঢোকে বলে সেখানে এই প্রযুক্তি পথ দেখাতে পারে বলে মনে করেন লাইটস ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। ৮ মে উপজেলার রোসাংগিরি ইউনিয়নের শীলেরহাট বাজারে ‘বোতল বাতির’ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।
প্রকল্পের পরিচালক মুহাম্মদ সানজিদুল আলম জানান, এ বাতি ব্যবহারে প্রতি মাসে ১০০ থেকে ২০০ টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। একবার লাগালে চার-পাঁচ বছর পর্যন্ত কোনো খরচ লাগে না। এ পর্যন্ত উপজেলার শীলেরহাট ও রোসাংগিরিতে বিনা মূল্যে ১০টি বোতল বাতি স্থাপিত হয়ছে। একেকটি বাতি স্থাপনে সর্বসাকল্যে খরচ পড়ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে উপজেলার ২০টি পরিবার এ বাতি ব্যবহার করেছে। গ্রামের বিদ্যালয়পড়ুয়া ১০ জন শিক্ষার্থীকে হাতে-কলমে বোতল বাতি তৈরির পদ্ধতি শিখিয়েছেন লাইটস ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।
রোসাংগিরি এলাকার আবুল বশর বলেন, ‘দিনের বেলায়ও ঘরের কয়েকটি কক্ষে আলো প্রবেশ করে না। সেসব কক্ষে আগে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালাতে হতো। এখন বোতল বাতি লাগিয়ে কোনো খরচ ছাড়াই আলো পাচ্ছি।’
শীলেরহাট এলাকার ব্যবসায়ী মো. নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘দোকানের ভেতরের কক্ষে বোতল বাতি লাগিয়েছি। এখন বেশ ঝকঝকে আলো পাচ্ছি।’
প্রকল্পের সহযোগী মুহাম্মদ রবিউল হোসেন জানান, লাইটস ফাউন্ডেশন এখন গবেষণা করছে এ বাতির নতুন সংস্করণ তৈরিতে। যেটি রাত ও দিন দুই সময়েই আলো দিতে পারবে। সংগঠনটি একটি জরিপও চালাচ্ছে, যা থেকে জানা যাবে বোতল বাতি আসলে কতটা প্রয়োজন মানুষের। এর ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে সংগঠনের কর্মপরিকল্পনা ঠিক হবে।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে চলতি মে মাসের শেষ সপ্তাহে রোসাংগিরি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন সংগঠনটির সদস্যরা। সেখানে বোতল বাতি তৈরি এবং এর ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।