পুলিশ ও আ. লীগ নেতার রোষে হয়রানির অভিযোগ

সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ঢাকা উত্তরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়া বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী ফারুক হোসাইন ভূঁইয়ার এক সমর্থকসহ তিন নির্বাচনী এজেন্ট পুলিশ ও আওয়ামী লীগের এক নেতার রোষানলের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফারুক হোসাইন দাবি করেন, বনানী থানার পুলিশ এক নির্বাচনী এজেন্টকে আটক করে নগদ ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে ওই টাকা ফেরতও দেওয়া হয়। দুজন নির্বাচনী এজেন্ট ও এক সমর্থকের ভ্রাম্যমাণ দোকান অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। এতে তাঁদের ব্যবসা অনেকটা বন্ধ হওয়ার পথে।
ফারুক হোসাইনের অভিযোগ, তাঁর পক্ষে নির্বাচনী এজেন্ট হওয়ায় ও তাঁকে সমর্থন করায় এ চারজনকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা এমন হয়রানি করছেন।
পুলিশের আটক বাণিজ্যের হয়রানি হচ্ছেন বলে যে অভিযোগ, এতে ভুক্তভোগী এজেন্টের নাম আব্দুল কাদের ওরফে বাবুল। তিনি গুলশানের কড়াইল এলাকার জামিয়া মোহাম্মদীয়া মাদ্রাসার ভোট কেন্দ্রে বিএনপির নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। কড়াইল বস্তির বউ বাজার এলাকায় তাঁর মুদির দোকান আছে।
প্রথম আলোকে দেওয়া আব্দুল কাদেরের ভাষ্য, ‘নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ৩০ এপ্রিল সকালে বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাকির হোসেনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আমার দোকানে আসে। তাঁরা কোনো কারণ ছাড়াই আমারে ধরে। পরে বাজারের লোকজন অনুনয়-বিনয় করলে আমাকে বাজার কমিটির কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে পুলিশ ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে আমার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা দাবি করে। ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার পর পুলিশ আমারে ছাইড়া দেয়।’
আব্দুল কাদেরের ভাষ্য, তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার পর এসআই জাকির তাঁকে বলেন, আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ তাঁকে ধরতে পারেন। তখন তিনি জাকিরকে জিজ্ঞেস করেন, কী অপরাধে তাঁর সঙ্গে এমনটা করা হচ্ছে। তখন জাকির বলেন, ‘তুই বিএনপি করস, এটাই তোর অপরাধ।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ঘটনার পর কাউন্সিলর প্রার্থী ফারুক ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) লুৎফুল কবীরের কার্যালয়ে গিয়ে মৌখিক অভিযোগ দেন। লুৎফুল কবীর অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য একই বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) গোলাম মোরশেদকে নির্দেশ দেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পান গোলাম মোরশেদ। তিনি এসআই জাকিরের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ফিরিয়ে নিয়ে আব্দুল কাদেরের কাছে হস্তান্তর করেন।
গত ৭ মে যোগাযোগ করা হলে এডিসি গোলাম মোরশেদ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, ‘ঘটনা রাজনৈতিক কোনো কিছু নয়।’ পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যোগাযোগ করা হলে এসআই জাকির বলেন, ‘যদি টাকা নেওয়া হয়, আর ফেরত দেওয়া হয়, তাহলে তো মীমাংসা হয়েই গেছে। আপনার সমস্যা কি? আর আমি তো কোনো টাকা নিইনি।’
কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ফারুকের দুই নির্বাচনী এজেন্ট মো. লিটন ও শাহজাহান কবীর এবং সালাউদ্দিন নামের একজন সমর্থকের ব্যবসাও ক্ষতির মুখে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের অভিযোগ, ফারুকের পক্ষে কাজ করায় তাঁরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শের মোহাম্মদের রোষানলের শিকার। শের মোহাম্মদ ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে ডিসিসি কাঁচাবাজার মার্কেট সমিতির চেয়ারম্যানও তিনি। কাঁচাবাজারের সামনে লিটনের ঘড়ি মেরামতের দোকান, শাহজাহানের মুদির দোকান ও সালাউদ্দিনের মুঠোফোনে টাকা পাঠানোর দোকান ছিল। শের মোহাম্মদের নির্দেশে তাঁদের দোকান কাঁচাবাজারের মুরগি বেচাকেনার স্থানের পাশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
গত ১৯ মে মঙ্গলবার লিটন বলেন, ‘বলেন ভাই, মুরগি বাজারের ওইখানে ঘড়ি ঠিক করতে কোনো কাস্টমার যাইব? কয়েক দিন তো ভয়ে মার্কেটে যাইতে পারি নাই। এক সপ্তাহ ধরে দোকান খুললেও কোনো কাস্টমার নাই।’ ভুক্তভোগী শাহজাহান কবীর এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। শুধু বলেন, ‘খুব কষ্টের মইধ্যে আছি ভাই। এক মাস ধইরা দোকান বন্ধ। ভুক্তভোগী সালাউদ্দিনও একই কথা জানান।
যোগাযোগ করা হলে শের মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের কাজ আমরা করি না। এ ধরনের কোনো রেকর্ড আমার নাই। সালাউদ্দিনেরা নিজেরাই তো দোকান খুলতেছে না।’ দোকান অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া এবং তাঁদের ভয়ের বিষয়টি জানানোর পর তিনি বলেন, ‘আপনি তাঁদের আমার সঙ্গে দেখা করতে বলেন।’
কাউন্সিলর পদে লড়া ফারুক বলেন, ‘নির্বাচনে নেমে এমনিতেই হয়রানির মধ্যে ছিলাম। নির্বাচনের পরও তা থেমে নেই। বরং আরও বাড়ছে। এ কোন দেশে আছি ভাই? ’