মোদি একাই আসছেন

নরেন্দ্র মোদি
নরেন্দ্র মোদি

ইচ্ছে ছিল প্রতিবেশী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়েই প্রথম বাংলাদেশ সফরে যাবেন নরেন্দ্র মোদি। অথচ এখনো পর্যন্ত যা অবস্থা তাতে একাই ঢাকা যাচ্ছেন তিনি। মোদির ৬ ও ৭ জুনের সফরসঙ্গী হচ্ছেন না পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীরা। কোনো মুখ্যমন্ত্রীকেই তাঁর সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য সরকারিভাবে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি।
এর পাশাপাশি এটাও এখন নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, মোদির সফর বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেও মমতাহীন এই সফরে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে না। তবে, সফর চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তা চুক্তি বিষয়ক আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে আশাব্যঞ্জক কিছু ঘোষণা করতে পারেন।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টনের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনাধীন। ওই বৈঠকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘তিস্তা নিয়ে আমরা চাপ দিচ্ছি না। কারণ, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন নেই, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর ওপর ভরসা রাখার কথা ঢাকায় গিয়ে বলে এসেছেন।’ গতকাল মঙ্গলবার কলকাতায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং অবশ্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিস্তা চুক্তি শিগগিরই হবে।

দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিস্তারে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার নতুন ঋণ দেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে। এর আগে ভারত ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল যার মধ্যে ২০০ মিলিয়ন পরে অনুদান হিসেবে গ্রাহ্য হয়। ঋণের পুরো টাকাই বাংলাদেশ ঠিকভাবে দক্ষতার সঙ্গে খরচ করেছে। পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর সে কথা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দুই দেশের মৈত্রী বৈঠকে জানিয়েও দিয়েছেন। ঋণের টাকা ঠিকভাবে খরচের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসাও করেন। এবার বাংলাদেশের দাবি ২ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে তারা ৫০০ মিলিয়ন অনুদান বা ‘গ্রান্ট’ হিসেবে চাইছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সূত্র প্রথম আলোকে জানান, দাবিটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফরে নিজেই নতুন ঋণের পরিমাণ ঘোষণা করবেন।
ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন, প্রতিবেশী দেশগুলির ক্ষেত্রে নীতি গ্রহণে প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর অভিমতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। সীমান্ত বিল পাস না করিয়ে বাংলাদেশ যেতেও তিনি চাইছিলেন না। সে জন্য দলীয় বিরোধিতাকেও তিনি উপেক্ষা করেছেন। চলতি মাসে কলকাতা গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি ঢাকা সফরে সঙ্গী হওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, যে চার রাজ্য সর্বসম্মতভাবে পাস হওয়া সীমান্ত বিলের আওতায় পড়ছে, তাদের মুখ্যমন্ত্রীদেরও তিনি এই সফরে তাঁর সঙ্গী হতে আমন্ত্রণ জানাবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো মুখ্যমন্ত্রীকেই সেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা এই প্রসঙ্গে আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এই সফরে গিয়ে যা যা ঘোষণা করবেন সব আমি করে দিয়েছি। সীমান্ত বিলে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছি। এই রাজ্যের চেকপোস্টগুলোর ব্যাপারে সব করে দিয়েছি। কলকাতা-আগরতলা ও ঢাকা-শিলিগুড়ি বাস যাতে চলতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কিছুই বাকি রাখিনি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। বাংলাদেশ সম্মানের সঙ্গে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আমিও সেখানে গিয়ে সব বিষয়ে সম্পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছি।’ সফরসঙ্গী হওয়ার প্রশ্নে মমতা বলেন, ‘কলকাতা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফরের প্রসঙ্গ ক্যাজুয়ালি তুলেছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’ মমতা বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের হৃদয়ে। আমি নিশ্চয় আবার বাংলাদেশে যাব। আমাদের বন্ধুত্ব দিন দিন দৃঢ় হচ্ছে।’
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ পাননি। আমন্ত্রণ পাননি আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমাও। ত্রিপুরায় রাজত্ব সিপিএমের, আসাম ও মেঘালয় কংগ্রেসের। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সচিবালয় থেকে বুধবার প্রথম আলোকে জানানো হয়, এখনো কোনো আমন্ত্রণ তাঁদের কাছে পৌঁছায়নি। একই দাবি আসামের মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়েরও। আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের একটি সূত্র প্রথম আলোকে বলেন, রাজ্য বিজেপি সীমান্ত বিল নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি করছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে সেই রাজনীতিতে হাওয়া দিতে মুখ্যমন্ত্রী রাজিও হতেন না।