আগে চুক্তি সই পরে প্রকল্প চূড়ান্ত

বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা
বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা

প্রথম ঋণ চুক্তির ধরনেই বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিতীয় ঋণ চুক্তি সই করতে যাচ্ছে ভারত। যৌথ ইশতেহারে ঋণচুক্তির পরিমাণ উল্লেখ করে ঘোষণা, চুক্তি সই আর সবার শেষে প্রকল্প ঠিক করা। ২০১০ সালে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি এভাবেই হয়েছিল। এবারের চুক্তিতেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ হবে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা।
ভারত ১০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি থেকে পরে ২০ কোটি ডলার মঞ্জুরি হিসেবে দেয়। ঋণ চুক্তির আওতায় যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে মোট ১৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৮৭ কোটি ডলার। এ পর্যন্ত সাতটি প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকি আটটি প্রকল্প আগামী তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছেন ইআরডির কর্মকর্তারা।
ভারতের সঙ্গে ঋণচুক্তির প্রক্রিয়ায় যুক্ত বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মকর্তা আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, এখন পর্যন্ত চুক্তিতে কি পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে এবং কি ধরনের প্রকল্প থাকবে তা নিয়ে ভারতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আলোচনা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের পর এ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।
এদিকে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে সামনে রেখে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধনী বিলে সম্মতি দিয়েছেন। সংসদ সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই আজ জানায়, প্রণব মুখার্জি গত ২৮ মে এ বিষয়ে ভারতের সংবিধান সংশোধনী (১০০ তম সংশোধনী) বিলে সম্মতি দেন। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা সফরের সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (বহুপক্ষীয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক) সুজাতা মেহতা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকে এক শ কোটি ডলারের নতুন ঋণ চুক্তির প্রস্তাব দেন। প্রথম চুক্তির মতো দ্বিতীয় চুক্তিতেও তিনি অবকাঠামোর কথা বলেন। যেহেতু অবকাঠামো নিয়ে কাজ চলছে দ্বিতীয় ঋণ চুক্তিতে অর্থমন্ত্রী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক খাতে ঋণচুক্তির টাকা ব্যবহারের পক্ষে মতো দেন।
জানতে চাইলে ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ চুক্তির পরিমাণ ও প্রকল্পের ব্যাপারে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হওয়ায় ঋণের পরিমাণ কত হবে তা স্পষ্ট নয়। ভারত ঋণের তথ্য গোপন রেখে হয়তো চমক দিতে চাইছে। তবে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আমাদের নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মোদি ঢাকা সফরের সময় তিন শ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তির ঘোষণা দিতে পারেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ঋণের পরিমাণ ও প্রকল্পের সংখ্যা চূড়ান্ত করার ব্যাপারে আলোচনা শুরু না হলেও বাংলাদেশ কোনো ধরনের প্রকল্পে আগ্রহী সেটি ভারত জানতে চেয়েছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ভারত সম্ভাব্য ক্ষেত্র ও প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ অবকাঠামো ও সামাজিক খাতের ১৫টি বিভিন্ন প্রকল্পের কথা ভারতকে জানায়। বাংলাদেশের দেওয়া প্রস্তাবে বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, সড়ক, রেল, নৌ পরিবহন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তির প্রায় তিন শ কোটি ডলারের প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে।
জানা গেছে, অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে সম্ভাব্য প্রকল্প প্রস্তাব নেওয়ার পাশাপাশি ঋণচুক্তি সইয়ের জন্য একটি সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) খসড়াও ভারত নিয়েছে। ওই খসড়ায় ঋণের পরিমাণ অবশ্য দু শ’ কোটি ডলার উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু প্রথম ঋণ চুক্তির ধারাবাহিকতায় পুরো বিষয়টি বাস্তবায়নের কথা ভাবা হচ্ছে, খসড়াতেও এটিকে প্রথম চুক্তির সম্প্রসারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন চুক্তিতে সুদের হার ও পরিশোধের সময় প্রথম চুক্তির মতো থাকবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, শেষ পর্যন্ত ভারত দু শ কোটি ডলার দিতে পারে। এবারের ঋণ চুক্তিতে শুধু অবকাঠামো না রেখে সামাজিক খাতে প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রথম ঋণ চুক্তিতে এক শতাংশ হার সুদে ২০ বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে ধরা হয় অর্থাৎ ওই সময় কোনো কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না।