ফতুল্লায় এক ব্যক্তিকে গুলি ও কুপিয়ে জখম

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ফরহাদ আহমেদ (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে সন্ত্রাসীরা। প্রকাশ্যে তাঁকে গুলি করে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। এভাবে নির্যাতন চালানো হলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি।
গতকাল সোমবার বিকেলে ফতুল্লা ডিআইটি মাঠে এ ঘটনা ঘটে। ফতুল্লা মডেল থানার কাছ থেকে ঘটনাস্থল কয়েক শ গজ দূরে। তা ছাড়া মাঠের পাশেই ফতুল্লা প্রেসক্লাব ও সামনে একটি বিশাল মার্কেট।
বুড়িগঙ্গা নদীতে চোরাই তেলের ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে যুবলীগের নামধারী সন্ত্রাসী বাঘা আরিফ ও তাঁর লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ফরহাদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, সদর উপজেলার ফতুল্লার পঞ্চবটিতে বিপিসির জ্বালানি তেলের দুটি ডিপো রয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীতে চোরাই তেলের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছিল বাঘা আরিফ বাহিনীর। কিন্তু পরে জেলা যুবলীগের এক শীর্ষ নেতা বুড়িগঙ্গা নদীর চোরাই তেল ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ দেয় ফরহাদের ওপর। আগে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল। এ কারণে তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল বাঘা আরিফ বাহিনী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গতকাল বিকেলে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফরহাদ ও তাঁর লোকজন তেল নামাতে গেলে সেখানে চার-পাঁচটি ট্রলার নিয়ে বাঘা আরিফ, ডাকাত বাবু ও রামাসহ ৪০-৫০ জনের একটি দল হানা দেয়। ওই সময় ফরহাদ তাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেন। কিন্তু বাঘা আরিফের সঙ্গে লোকজন বেশি হওয়ায় একসময় ফরহাদের লোকজন পিছু হটে যায়। পরে বাঘা আরিফের লোকজন ফরহাদকে ধরে পেটাতে পেটাতে ফতুল্লার ডিআইটি মাঠে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফরহাদকে মাঠে এনে প্রথমে গুলি করা হয়। পরে চাপাতি দিয়ে কোপানোর পর ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে পেটে বেশ কয়েকটি আঘাত করা হয়। কেটে দেওয়া হয় তাঁর পায়ের রগ। পরে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয় তাঁর দুই চোখ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আধা ঘণ্টা ধরে নির্যাতন শেষে সন্ধ্যা নামার আগে সন্ত্রাসীরা চার-পাঁচটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে ও ৪০-৫০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ সময় আরও পাঁচ-ছয়জনকে ধরে মারধর করা হয়। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর ফতুল্লা মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সেলিমের নেতৃত্বে দুজন কনস্টেবল ঘটনাস্থলে এসে এরশাদকে উদ্ধার করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান। সন্ধ্যায় র্যাব-১১-এর এএসপি শিবলীর নেতৃত্বে সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে ফরহাদের স্ত্রী শিল্পী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তাঁর স্বামীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে তাঁরা চেষ্টা করছেন।
দেরিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান খান দাবি করেন, খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ।