নীরব ঘাতকের সঙ্গে কবি কাজী রোজীর দুই দশক

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দেওয়া, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসেবে সিনেমা দেখা, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সঙ্গে কাজ করা, জাতীয় কবিতা পরিষদের সম্পাদকীয়মণ্ডলীর সদস্যের দায়িত্ব পালন—এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন কবি কাজী রোজী। ২০ বছর আগে এই কবির স্তন ক্যানসার শনাক্ত হয়। তাঁকে দেখে অন্য রোগীরা মনে সাহস পান।
লেখালেখিসহ প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততায় চাপা পড়ে যায় কাজী রোজীর ভয় ও যন্ত্রণা। কবিতা লিখেছেন ক্যানসার নিয়ে। ক্যানসারের সঙ্গে বসবাসের ১৫ বছর পূর্তিতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ‘নারী শক্তি সম্মাননা’ পাওয়ার বিষয়টি গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর মতে, ক্যানসার রোগীদের এভাবে সাহস জোগালে তাঁদের পক্ষে লড়ে যাওয়াটা সহজ হয়।
১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারি। গোসল করতে গিয়ে স্তনের মধ্যে শিমের বিচির মতো কিছু একটা টের পান কাজী রোজী। লজ্জা, ভয় সবকিছু পেছনে ফেলে ছোট ভাই ও চিকিৎসক কাজী সুপ্রিয় হিল্লোলকে বিষয়টি জানান তিনি। তারপর শুরু হয় চিকিৎসা। কেমো থেরাপি নিতে হয়েছে। কেটে ফেলতে হয় একটি স্তন। মাথার চুল পড়ে যায়। গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে তিনি শক্ত খাবার খেতে পারছেন না। কাজী রোজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেঁচে আছি। স্তন হারানোর ফলে আমার মন খারাপ হয়নি।’
সরকারি চাকরি করতেন কাজী রোজী, অবসরের পর পাওয়া টাকা ব্যাংকে রেখে দেন। সেখান থেকে হাতখরচটা চলে। থাকেন একমাত্র মেয়ে সুমি সিকান্দারের সঙ্গে। মেয়ের জামাই, দুই নাতি নিয়েই এখন তাঁর সংসার।
কাজী রোজী বলেন, ক্যানসার মোকাবিলায় প্রথম প্রয়োজন মনের ভেতরের সাহস ও মনোবল। তারপর লাগে পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও কর্মস্থলের সহযোগিতা। আর কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকা খুবই জরুরি।
ব্যস্ততার মধ্যেও কাজী রোজী নিয়ম মেনে চলেন। ওষুধ খেতে ভুল করেন না। অন্যদের সচেতন করার সময় তিনি মেয়ে বা নারীরা যাতে স্তন ক্যানসার নিয়ে লজ্জা না পান, প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করা এই সংগ্রামী নারীর শেষ ইচ্ছা, অসুস্থ হয়ে যেন বিছানায় পড়ে থাকতে না হয়।