নানা অভিযোগ, তবু স্বপদে বহাল তিনি!

তাঁর নির্দেশে তেল চুরি করতে গিয়ে যৌথ বাহিনীর কাছে ধরা পড়েছিলেন তিন কর্মচারী। আবার ঘুষের বিনিময়ে দক্ষ গাড়িচালকদের বাদ দিয়ে অদক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগসহ এ রকম ১১টি অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, দুটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি নয়টি অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে।
তিনি হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) শামসুল হুদা সিদ্দিকী।
শামসুল হুদা সিদ্দিকীকে যান্ত্রিক শাখা থেকে সরিয়ে দিতে সুপারিশ করেছেন করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন। আর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে গত ২৭ মে ও ২২ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবুও তিনি স্বপদে বহাল আছেন।
করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শামসুল হুদা সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগের তদন্ত শেষ হয়েছে। এ প্রতিবেদন এখনো পর্যালোচনা করা হয়নি। আরও কয়েকটির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ১৩ এপ্রিল করপোরেশনের তিন কর্মচারী মেঘনা পেট্রোলিয়াম থেকে তিন লাখ ৪৯ হাজার ৩৩৫ টাকার তেল উত্তোলন করে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী। প্রকৌশলী শামসুল হুদার নির্দেশে এ
কাজ সংঘটিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, শামসুল হুদার নির্দেশে গত ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় রাস্তা সংস্কারে সিমেন্ট ছাড়া বিটুমিন ব্যবহারের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া করপোরেশনের ড্রেজিং প্লান্টের শ্রমিক আবদুল মাবুদকে ১৫ হাজার টাকায় সাগরিকা ওয়ার্কশপে বদলি এবং তাঁর ভাই আবদুল হামিদকে পদোন্নতি দিতে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
তদন্তে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন। তিনি বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি কোনো যুক্তি দিতে পারেননি।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, গত মে মাসে চট্টগ্রামের তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম তদন্ত করে চারটি অভিযোগের সত্যতা পান। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চার গাড়িচালকের কাছ থেকে প্রকৌশলী সিদ্দিকীর এক লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ। অন্য অভিযোগের মধ্যে রয়েছে করপোরেশনের একটি যন্ত্র অকেজো দেখাতে যন্ত্রের ভেতরে টিনের টুকরা ঢুকিয়ে দেন তিনি। তেল চুরির মিথ্যা অভিযোগ এনে অন্তত তিন গাড়িচালককে তিনি চাকরিচ্যুত করেছেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে করপোরেশনের স্টোর থেকে মেহগনি কাঠের গুঁড়ি আত্মসাৎ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল হুদা সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘সব অভিযোগই ভুয়া। দুদক তদন্ত করে আমার বিরুদ্ধে কিছু পায়নি। অন্যায় করে থাকলে আমাকে শাস্তি দেওয়া হোক।’
সিটি করপোরেশনের সচিব রশিদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে, অভিযোগের ধরণ অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে লঘু অথবা গুরু শাস্তি নেওয়া যেতে পারে। এখন শামসুল হুদা ছিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।’ তিনি জানান, গুরু শাস্তি হচ্ছে সাময়িক বরখাস্ত ও পদাবনতি আর লঘু শাস্তি হচ্ছে তিরস্কার, ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা ইত্যাদি।