গাইবান্ধায় ওসিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিউর রহমান ও একজন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন গাইবান্ধার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম এসএম তাসকিনুল হক।

ওই আদালতের কর্মচারী কমল চৌধুরীসহ তিনজন কর্মচারীকে মারপিটের অভিযোগে আজ রোববার মামলা দায়ের করা হলে আজই আদালত এই আদেশ দেন।
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে এই আদেশ তামিল করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সহকারী পুলিশ সুপারকে (এ সার্কেল) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সদর থানার ওসিসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রংপুর বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারকেও বলা হয়েছে।
যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে তাঁরা হলেন, গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিউর রহমান, সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক আয়েশ উদ্দিন, গাইবান্ধা ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রাকিব হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আইয়ুব হোসেন এবং কনস্টেবল রফিক, ওই ব্যাংক শাখায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল সাদ্দাম, সাইমুম, শাহিনুর, আবদুল্লাহ ও বাবলু।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, আদালতের কর্মচারী কমল চৌধুরী ২ জুলাই সকালে একজন বিচারক ও তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনের টাকা উত্তোলনের জন্য দুইটি চেক নিয়ে সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা শাখায় যান। তিনি চেক দুইটি ব্যাংকে জমা দিয়ে টোকেন সংগ্রহ করেন। বিকেল পাঁচটার পর কমল চৌধুরী ব্যাংকে গিয়ে ভেতর হইচই শুনতে পান। তিনি ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে দেখেন, সহকারী উপপরিদর্শক আইয়ুব হোসেন নিজেই ক্যাশ কাউন্টারের ভেতর চেকের সিরিয়াল ওলটপালট করছেন।
এ সময় কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গাইবান্ধা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের রেকর্ড কিপার মোজাম্মেল হক, ক্যাশিয়ার জুয়েল কবীরসহ অন্যান্য গ্রাহকেরা ওই সহকারী উপপরিদর্শকের কাজের প্রতিবাদ করেন। এতে আইয়ুব হোসেন ‌ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদের ধমক দিয়ে বলেন, ‘আমি পুলিশের লোক, বেশি বাড়াবাড়ি করলে ব্যাংক ডাকাতির মামলায় ফেলে দেব।’ তখন কমল চৌধুরী উভয় পক্ষকে শান্ত হতে বলেন। এতে তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে কমল চৌধুরীকে গালিগালাজ করেন এবং ব্যাংক ডাকাতি মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন। পরে তিনি তাঁর হাতে থাকা হাতকড়া দিয়ে ব্যাংকের কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেন এবং অন্য পুলিশ সদস্যদের পোশাক পরে তৈরি হতে বলেন।
এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। কিছুক্ষণ পর আইয়ুব হোসেন গেট খুলে দিলে সাদা পোশাকে উপপরিদর্শক রাকিব হোসেনের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের লোকজন ব্যাংকে ঢোকেন। এ সময় শাখা ব্যবস্থাপক কমল চৌধুরীকে তাঁর কক্ষে নিয়ে বসান। ওই কক্ষেই ডিবি পুলিশ কমল চৌধুরীকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন এবং টেনে হিঁচড়ে কক্ষের বাইরে নিয়ে যান।
এ সময় আইয়ুব হোসেনের নির্দেশে ডিবি পুলিশের কনস্টেবল রফিক, ব্যাংক শাখায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল সাদ্দাম, শাহিনুর, সাইমন, আবদুল্লাহ, বাবলুসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁকে কিল ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারতে থাকেন। এতে কমল চৌধুরী মারাত্মক আহত হন। খবর পেয়ে সদর থানার ওসি রাজিউর রহমান ব্যাংক শাখায় গিয়ে কমলকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তাঁকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় কমল চৌধুরী বাদী হয়ে দুপুরে সদর থানার ওসি রাজিউর রহমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গাইবান্ধার জ্যৈষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিউর রহমান বলেন, মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথা শুনেছি। তবে ঘটনাটি যেভাবে বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। মূলত উত্তেজনার খবর শুনে ব্যাংক শাখায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।