রেলপথে পাথরের সংকট ঝুঁকিতে চলছে ট্রেন

সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলপথের গাইবান্ধার কামারপাড়া থেকে রংপুরের কাউনিয়া রেলস্টেশন পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটারে প্রয়োজনীয় স্লিপার, পাথর ও ক্লিপ নেই। যেসব স্লিপার রয়েছে, সেগুলোও অকেজো হয়ে পড়েছে। স্লিপার অকেজো হওয়ায় ক্লিপ কাজে আসছে না। এই বাস্তবতায় রেল কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার কমিয়ে দিয়েছে। তার পরও ঝুঁকি রয়েই গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রেনচালক বলেন, ‘আমাদের দেখেশুনে ট্রেন চালানোর সুযোগ নেই। স্টেশনের সংকেতের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই ঝুঁকি জেনেও হাজারো যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।’
গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, এই প্রকৌশল বিভাগের আওতায় সান্তাহার-লালমনিরহাট পথের বোনারপাড়া রেলস্টেশন থেকে রংপুরের কাউনিয়া রেলস্টেশন পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার রেলপথ ও ১৩টি স্টেশন রয়েছে। স্টেশনগুলো হচ্ছে বোনারপাড়া, বাদিয়াখালী, ত্রিমোহিনী, গাইবান্ধা, কুপতলা, কামারপাড়া, নলডাঙ্গা, বামনডাঙ্গা, হাসানগঞ্জ, চৌধুরানী, পীরগাছা, অনোদানগর ও কাউনিয়া। এর মধ্যে কামারপাড়া স্টেশন থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার পথের অবস্থা করুন। এই অংশে এক লাখ ২০ হাজার স্লিপার, আট লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ সেফটি পাথর এবং দুই লাখ ৪০ হাজার ক্লিপ থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে অর্ধেক পরিমাণ স্লিপার, পাথর ও ক্লিপ রয়েছে।
ফলে কামারপাড়া-কাউনিয়া রুটে চলাচলকারী ছয়টি ট্রেনের গতি প্রতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার কমিয়ে (৫০ কিলোমিটার) চালানো হচ্ছে। ট্রেনগুলো হচ্ছে রংপুর, লালমনিরহাট, দোলনচাঁপা, করতোয়া এক্সপ্রেস, সেভেনআপ ও বগুড়া মেইল। এই গতিতে ট্রেন চলাচলের কারণে কামারপাড়া থেকে কাউনিয়া যেতে সময় বেশি লাগছে। অথচ কামারপাড়া-বোনারপাড়া পথে একই ট্রেন চলছে ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার গতিতে।
রেলওয়ের একটি সূত্র জানায়, ১৯৮৮ সালের দিকে এই রেলপথে কাঠের স্লিপার স্থাপন করা হয়। এসব স্লিপারের স্থায়িত্ব এক যুগ। অথচ স্থাপনের ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও তা পরিবর্তন কিংবা নতুন স্লিপার স্থাপন করা হচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মেরামতের অভাবে কান্তানগর, প্রতাব, তেলানিপাড়া, জামাল, রামদেব, বলিহাট, অনন্তরাম, কালীগঞ্জ এলাকায় কাঠের স্লিপারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো স্থানে স্লিপার পচে নষ্ট হয়েছে, কোনো কোনো স্থানে স্লিপারের অর্ধেক অংশ ক্ষয়ে গেছে। এ কারণে এসব স্থানে স্লিপার থেকে পৃথক হয়েছে নাট-বলটু ও ক্লিপ। কোথাও কোথাও নাট-বলটু চুরি গেছে। ফলে রেলপথ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ গ্রামের নিয়মিত ট্রেনযাত্রী মোস্তাফিজার রহমান (৪৫) বলেন, ট্রেন ভ্রমণ নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। কিন্তু গতি হ্রাসের কারণে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। একই গ্রামের চাকরিজীবী আবদুল জোব্বার (৫২) বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ অনেকটা ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু রেলপথে যোগাযোগব্যবস্থা খুবই নাজুক। অথচ রেল যোগাযোগব্যবস্থা আধুনিক করলে একদিকে যাত্রীসেবা বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে সরকারের আয়ও বাড়বে।
বামনডাঙ্গা রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) দীপক কুমার সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, প্রয়োজনীয় স্লিপার, পাথর ও ক্লিপ স্থাপনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করা যায়, অল্প দিনের মধ্যেই রেলপথ সংস্কার করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া নিয়মিত রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণে শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে।