শরীয়তপুরে চারটি বিদ্যালয় বিলীন, ফরিদপুরে বাঁধে ধস
ফরিদপুরে গতকাল বুধবার সকালে শহর রক্ষা বাঁধের ৫০ মিটার অংশ ধসে গেছে। এ ছাড়া শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ২০টি গ্রামে পদ্মার তিন দিনের ভাঙনে প্রায় এক হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। নদীতে বিলীন হয়েছে চারটি বিদ্যালয়। ভাঙনের কারণে একটি বাজারের শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ৪০০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শরীয়তপুর কার্যালয়, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনে পদ্মা নদীতে স্রোত বেড়েছে। গত শনিবার থেকে নদীভাঙন শুরু হয়। এতে জাজিরা উপজেলার বড় কান্দি ইউনিয়নের আটটি, পালেচর ইউনিয়নের তিনটি, বিলাসপুরের চারটি ও কুণ্ডেরচরের পাঁচটি গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। বড় কান্দি ইউনিয়নে অবস্থিত নজিম উদ্দিন ব্যাপারী কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড় কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বড় কান্দি বি কে মডেল একাডেমির ভবন নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কারণে দুর্গার হাট বাজারের ১০২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জাজিরার বড় কান্দি ইউনিয়নের রঞ্জন ছৈয়াল কান্দি গ্রামের আবদুল মান্নান ব্যাপারী (৬০) ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ধান আবাদ করেছিলেন। বসতবাড়ির পাশাপাশি বোরো ধানসহ তাঁর তিন বিঘা জমি পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই খোঁজার পাশাপাশি এখন কীভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন সে চিন্তায় রয়েছেন তিনি। তাঁর মতো এমন অবস্থা এ এলাকার কয়েক শ কৃষকের।
গত মঙ্গলবার জাজিরার ভাঙনকবলিত পাঁচটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরবর্তী গ্রামের লোকজন ভাঙনে ঘর বিলীন হওয়ার শঙ্কায় সেসব সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাদের বলেন, জরুরি ত্রাণ সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাঁচ মেট্রিক টন চাল ও দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বড় কান্দি ইউনিয়নে তা বিতরণ করা হবে।
শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল খালেক বলেন, ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এ মুহূর্তে আমাদের কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। অর্থ বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ফরিদপুরের শহররক্ষা বাঁধের ৫০ মিটার অংশ ধসে গেছে। গতকাল বুধবার সকাল ছয়টার দিকে সদর উপজেলার ডিক্রির চর ইউনিয়নের মৃধাডাঙ্গি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য নদীর ভেতর থেকে তীর পর্যন্ত ২০টি সারি করে যেসব বোল্ডার বসানো হয়েছিল তার মধ্যে ১৮টি সারিরই ৫০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
ডিক্রির চর ইউপির চেয়ারম্যান সাদেকুজ্জামান মিলন বলেন, কয়েক হাজার ব্লক নদীর তীরে পড়ে আছে। এগুলো নদীতে ফেলা হলে এ ঘটনা ঘটত না। পাউবো ফরিদপুরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আপাতত বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকাব। এরপর পানি কমে গেলে বোল্ডার স্থাপন করা হবে। ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, এই ভরা বর্ষায় ভাঙনস্থলে বোল্ডার স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। ভাঙন রোধে ইতিমধ্যেই ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (গতকাল) বিকেল থেকেই কাজ শুরু করা সম্ভব হতে পারে।