দল আরও শক্তিশালী, কমিটি আছে, দ্বন্দ্ব নেই

দিনাজপুর জেলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। জেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যন্ত কমিটি আছে। কিন্তু কমিটির পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব নেই। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী হওয়ার কথা বিএনপির নেতারাও স্বীকার করেছেন।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেছেন, সব পর্যায়ে কমিটি থাকা, দ্বন্দ্ব না থাকা এবং প্রতিদিন নেতা-কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ সাংগঠনিক ভিত্তি শক্ত করেছে। জেলা কার্যালয়সহ পাঁচটি স্থানে প্রতিদিন নেতা-কর্মীরা সমবেত হন। ফলে জেলায় এখন দল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। ই-টেন্ডার হওয়ায় টেন্ডারবাজির বিষয়ও নেই। নেতারা বলেন, প্রতি মাসে জেলা কমিটির সভা ছাড়াও কেন্দ্রঘোষিত যেকোনো কর্মসূচি পালনের আগে মূল দল ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বর্ধিত সভা করা হয়।
নেতা-কর্মীরা বলেছেন, সন্ধ্যার পর শহরের বাসুনিয়াপট্টিতে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় সরগরম থাকে। এ ছাড়া কার্যালয়ের পাশে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আনোয়ারুল ইসলামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও থাকে নেতা-কর্মীদের ভিড়। চারুবাবুর মোড়ে লোকনাথ মন্দিরে কোতোয়ালি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষের কার্যালয়েও থাকে এমন ভিড়। জেলা পরিষদ কার্যালয়ে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরীর কার্যালয় এবং বাহাদুর বাজার এলাকায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু ইবনে রজ্জবের কার্যালয়ও থাকে সরগরম। ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা, বদলি, চিকিৎসা, বিয়ের জন্য সহায়তার আশায় সাধারণ মানুষও দলীয় কার্যালয় ও নেতাদের কাছে যান।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. বজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ আসনে দলের কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেবেন। সেই হিসেবে জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে সাংসদদের পরামর্শ ও ইচ্ছানুযায়ী মূল দল ছাড়াও সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোর শহর, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সব পর্যায়ে কমিটি গঠিত হয়েছে।
সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় শতাধিক নেতা-কর্মীর ভিড়। আজিজুল ইমাম চৌধুরীসহ উপস্থিত নেতারা বললেন, জেলার নেতা-কর্মীরা প্রতিদিনই আসেন। দলের কেন্দ্রীয়-স্থানীয় কর্মসূচি পালন, সমস্যা, বিবাদ মেটানো ইত্যাদি অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়। পাশেই মো. আনোয়ারুল ইসলামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েও শতাধিক কর্মীর দেখা গেল।
মো. আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বললেন, স্থানীয় সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের নির্দেশ হলো সংগঠন গোছানো; মাদক নিয়ন্ত্রণ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজির কাজে যেন কর্মীরা জড়িত না হন, তা কঠোরভাবে দেখা। রাজনীতির নামে পেট্রলবোমা, হরতাল-অবরোধ যাতে নাগরিক জীবনে প্রভাব ফেলতে না পারে, বিশৃঙ্খলা, মারামারি যেন না হয় এবং ব্যবসায়ী সমাজের নানা সমস্যার সমাধানেও ভূমিকা রাখতে হয়।
একদিন সকালে চারুবাবুর মোড় এলাকায় লোকনাথ মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, কোতোয়ালি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষকে ঘিরে আছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের একজন দলের নারী নেত্রী মৌসুমি দাস বললেন, তাঁর বাবা হাসপাতালে ভর্তি। এসেছেন সহযোগিতার জন্য। ফাজিলপুর ইউনিয়নের কর্মী মোবারক আলী, সুন্দরবন ইউনিয়নের শরৎ চন্দ্র রায়সহ আরও কয়েকজন নানা সমস্যার সমাধানের আশায় এসেছেন বলে জানান।
একই দিন দুপুরে জেলা পরিষদ ভবনে প্রশাসকের কার্যালয়ে কথা হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসনে ইমাম, মো. তহিদুল ইসলাম, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মাওলানা মো. আকরামের সঙ্গে। আজিজুল ইমাম চৌধুরী বলেন, ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের ৭১ সদস্যের কমিটি কেন্দ্রীয় অনুমোদন পেয়েছে দুই বছর পর। কেন্দ্র অনুমোদনের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছর ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিটির মেয়াদ নির্ধারণ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে গত সাত বছরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট। তবে পাবলিক পারসেপশন ও গুড গভর্ন্যান্স নিয়ে মানুষের অতৃপ্তি আছে। এ ক্ষেত্রে আরও উন্নতি দেখতে চান সবাই।
অবশ্য আওয়ামী লীগের দু-একজন বললেন, পাওয়া না-পাওয়া, উন্নয়নকাজের ভাগ নিয়ে কারও কারও মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও তা প্রকাশ্য নয়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জেলা পরিষদের প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত নেতারা বলেন, জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। সবার সীমাবদ্ধতা আছে। সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। তাই অনেকের অতৃপ্তি থাকতে পারে। তবে দলে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহবুব আহমেদ এবং কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে জেলায় আওয়ামী লীগ অনেক বেশি সংগঠিত, এ কথা স্বীকার না করার কোনো কারণ নেই।