হঠাৎ অভিযানে জনভোগান্তি

ঢাকাসহ সারা দেশে আবারও ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এর ফলে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীতে গণপরিবহনের চলাচল কমে যায়। হঠাৎ অভিযানে দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী।
১ আগস্ট থেকে মহাসড়ক থেকে ধীরগতির তিন চাকার যান চলাচল বন্ধেও অভিযান শুরু হয়। এর প্রতিবাদে এসব যানের মালিক-শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। এর ফলে সড়ক-মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে নৈরাজ্য-দুর্ভোগ।
অবশ্য সড়ক পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা ধীরগতির এবং ফিটনেসবিহীন যানের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে সমর্থন জানিয়েছেন।
গত সোমবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ এবং ভুয়া চালক লাইসেন্স জব্দ করার নির্দেশ দেন। গত বুধবার থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বিআরটিএ ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান শুরু হয়।
গতকাল ঢাকায় বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসে যাত্রাবাড়ী, বিমানবন্দর সড়ক, আরামবাগ ও আগারগাঁওয়ে। এ সময় আদালত ৮২ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করেন। মামলা করা হয় ৬৯টি। প্রয়োজনীয় কাগজ না থাকায় ২২টি যানবাহন জব্দ করা হয়। ২০ জন চালককে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড।
এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই রাজধানীতে যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল কমে যায়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাত থেকে বাঁচতে কিছু কিছু বাস ভিন্ন পথে চলেছে। অনেক বাস ভয়ে রাস্তায় নামেনি। ফলে গণপরিবহনের সংকট দেখা দেয় এবং ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও মহাখালী এলাকায় শত শত ঘরমুখো মানুষকে যানবাহনের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।
একটি কীটনাশক কোম্পানির বিপণন কর্মকর্তা রাসেদুল আলম বলেন, এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও আজিমপুরের বাস ধরতে পারেননি। দুই-তিনটা বাস এলেও ভিড়ের কারণে উঠার সুযোগ হয়নি। অবশেষে ২০০ টাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে আমিজপুর যান।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ফিটনেসবিহীন যান চললেও যাত্রীদের দুর্ভোগ আবার অভিযান শুরু হলেও দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। অভিযান চলমান প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। কয়েক দিন অভিযান চালিয়ে থেমে গেলে এর কোনো সুফল পাওয়া যায় না। আর যাত্রী দুর্ভোগ লাঘবে নতুন নতুন গণপরিবহন নামাতে হবে। তাহলেই অভিযান ফলপ্রসূ হবে এবং যাত্রীরাও এর সুফল পাবে।
বিকেলের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় ‘লক্কড়ঝক্কড়’ বাস নামতে দেখা গেছে।
এর আগে ২০১৩ সালের নভেম্বরে ফিটনেসবিহীন যানের বিরুদ্ধে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অভিযান শুরু হলেও কয়েক দিন পর তা থেমে যায়।
জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, কিছুটা দুর্ভোগ হলেও একটা পর্যায়ে এর সুফল সাধারণ মানুষই পাবে। হঠাৎ হঠাৎ অভিযান চালানোর বিষয়ে তিনি বলেন, সারা বছর তো একই মাত্রায় অভিযান চালানো যায় না। আর এবার যানবাহন জব্দ এবং কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে বেশি। ফলে একটা শৃঙ্খলায় চলে আসবে।
ধীর গতির যান উঠলে দুর্ঘটনা কমবে: জাতীয় মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশাসহ ধীর গতির তিন চাকার যান উচ্ছেদে সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির দাবি, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে মহাসড়কে ২০-২৫ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা কমবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতারা বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ধীর গতির যান চলাচল বন্ধ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে অটোরিকশা শ্রমিকেরা তাদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হওয়ার যে দাবি করেছেন তা যৌক্তিক নয়। যেসব সড়কে অটোরিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তা দেশের মোট সড়কের মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ। বাকি আড়াই লাখ কিলোমিটার সড়কেই তো এসব অটোরিকশা চলাচল করতে পারছে।
এনায়েত উল্যাহ আরও বলেন, ফিটনেসবিহীন যান ও চালকের ভুয়া লাইসেন্স জব্দ করার অভিযানে তাদের সমর্থন আছে। তবে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অভিযান শুরু করে তা যেন হঠাৎ বন্ধ না করা হয়।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক তালুকদার বলেন, ধীর গতির ও উচ্চ গতির যান একসঙ্গে চলতে দিলে দুর্ঘটনা কখনই কমবে না।
সম্প্রতি ফরিদপুরে পূর্বঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘট ডেকে যাত্রীদের জিম্মি করার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী দাবি করেন, বাসে ডাকাতির পর পরিবহন শ্রমিকেরা মামলা করতে গেলে তাদেরই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আসল ডাকাতদের গ্রেপ্তারের দাবিতেই ধর্মঘট ডাকা হয়।
জ্বালানি নিতে মহাসড়কে যাওয়া যাবে: জ্বালানি নেওয়ার জন্য দিনে দুই ঘণ্টার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশার মহাসড়কে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সাংবাদিকদের বলেন, সকাল ছয়টা থেকে সকাল আটটার মধ্যে মহাসড়ক-সংলগ্ন সিএনজি স্টেশনে অটোরিকশায় জ্বালানি নেওয়া যাবে। তবে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য যাওয়ার সময় অটোরিকশায় কোনো যাত্রী থাকতে পারবে না।