হাসিনা-খালেদা টেলিফোনে যা বলেছিলেন-৩

শেখ হাসিনা: না না। আপনি তো আরও হরতাল দেবেন। আপনি ৩৩০ দিন হরতাল দিয়েছিলেন। সেটা তো আমার মনে আছে।
খালেদা জিয়া: ৩৩০ দিন দেইনি কিন্তু। আপনি ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছেন। মনে নেই? আচ্ছা আপনি বলেন, ১৯৯১ সালে আমরা দুজনে আন্দোলন করে গণতন্ত্র আনলাম। তার পরে সেখানে আপনি অপজিশনে গেলেন, তাতে কী আছে? আমরা একসঙ্গে কাজ করতাম। কিন্তু আপনি তো সংসদে ফ্লোরে দাঁড়িয়ে বললেন, এক দিনের জন্য আমাকে শান্তিতে থাকতে দেবেন না।
শেখ হাসিনা: এটা আমি বলিনি। নো।
খালেদা জিয়া: এগুলো তো রেকর্ড আছে। আর তত্ত্বাবধায়ক? তত্ত্বাবধায়ক তখন কার ছিল? জামায়াতের ছিল। আপনি তখন তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া মানবেনই না।
শেখ হাসিনা: তখন মাগুরার ইলেকশন।
খালেদা জিয়া: মাগুরার ইলেকশন? ভোলার ইলেকশন আপনি বলেন না কেন?
শেখ হাসিনা: ভোলার ইলেকশনের পরে যে সিচুয়েশন তৈরি হয়, তখন উপায় ছিল কি? ওইভাবে ভোট কারচুপি করলে...
খালেদা জিয়া: এই সিচুয়েশন এখনো হয়েছে। আপনার পক্ষে আপনার ডিসি ভোট চেয়ে বেড়ায়। ডিসি নৌকায় ভোট চেয়ে বেড়ায়।
শেখ হাসিনা: ডিসি কী কথা বলছে আর পত্রিকা কী কথা বলছে
খালেদা জিয়া: না, এগুলো ঠিক তো। আপনি কালকে ডিসিকে বলবেন ব্যালট বাক্স ভর্তি করো। নো, এগুলো হতে পারে না। আপনি যদি ৩০ তারিখে করতে চান, আমি রাজি আছি। আমার এটা ফাইনাল। এর বাইরে আমি যেতে পারি না।
শেখ হাসিনা: না না। ডিসিরা ভোট চাইবে কী জন্য।
খালেদা জিয়া: চেয়েছে তো। পত্রিকায় এসেছে তো।
শেখ হাসিনা: ভোট চাওয়ার লোকের আমার অভাব নাই। আমার দল তো এ দেশে সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জন্ম নিছে।
খালেদা জিয়া: আমার দলও। অনেক সংগ্রাম করে ক্ষমতায় এসছে। এগুলো কথা বললে কথার পৃষ্ঠে কথা আসবেই।
শেখ হাসিনা: আমি আবারও আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি হরতালটা প্রত্যাহার করেন।
খালেদা জিয়া: আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না। আপনি সময়মতো আমাকে টেলিফোন করেননি। সে জন্য আমি দুঃখিত। কালকে যদি টেলিফোন করতেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি অন্য রকম হতো।
শেখ হাসিনা: আপনি কালকেই তো আলটিমেটাম দিলেন। কালকে একটার দিকেই তো আপনাকে ফোন করেছি। তাও পাইনি। আপনি বলছেন ফোন বাজতেছে না। কিন্তু আমার যে এডিসি দেড়টা-পৌনে দুইটা থেকে চেষ্টা করছে।
খালেদা জিয়া: ফোন না বাজলে তো আমার কিছু করার নেই। আমি তো বলেছিলাম নয়টার সময় নেতাদের ডাকব, কথা বলব, তখনো তো আমাকে ফোন দিলেন না। আপনি তো বসে থাকলেন ছয়টা, ছয়টা...
শেখ হাসিনা: আমার জরুরি মিটিং। কোনো মিটিংয়ে আমি দেরি করতে পছন্দ করি না। অলরেডি দেরি হয়ে গেছিল।
খালেদা জিয়া: আপনি যদি মনে করেন মিটিং বেশি ইমপোরটেন্ট, না এটা বেশি ইমপোরটেন্ট।
শেখ হাসিনা: না, সব মিটিং তো ইমপোরটেন্টই। আমার কথা বলার পর আপনি ১২টার দিকে নেতাদের সঙ্গে বসে হরতালটা প্রত্যাহার করে নিতেন।
খালেদা জিয়া: মিটিং থেকে বের হয়েও আপনি কথা বলতে পারতেন। তাহলে আমার তখন সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো।
শেখ হাসিনা: আপিন দয়া করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন।
খালেদা জিয়া: এককভাবে আমি কীভাবে সিদ্ধান্ত নিব?
শেখ হাসিনা: আপনি বলেন যে আমি আপনাকে অনুরোধ করছি। সে অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আপনি হরতালটা প্রত্যাহার করছেন। সে কথা জনগণের সামনে বলেন।
খালেদা জিয়া: না, সেটা তো হবে না। তাহলে আপনি বলবেন যে আপনি নির্দলীয় সরকার মেনে নেবেন। তাহলে আমি হরতাল উইথড্র করব।
শেখ হাসিনা: তাহলে আর আলোচনার কী থাকল?
খালেদা জিয়া: নো, আলোচনা অনেক থাকে। আলোচনার অনেক প্রক্রিয়া থাকে। আপনি বলেন যে আমি নির্দলীয় সরকার মেনে নেব। তাহলে আমি হরতাল উইথড্র করব।
শেখ হাসিনা: আমার ৯০ ভাগ সিট থাকা সত্ত্বেও আমি আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি সর্বদলীয় সরকার করার জন্য।
খালেদা জিয়া: সর্বদলীয় সরকার হয় না। আপনি এর আগেও বলেছেন। সেগুলো হতে পারে না। আপনি যদি বলেন যে এখন আপনি নিরপেক্ষ সরকারের জন্য রাজি আছেন, তাহলে আমি হরতাল উইথড্র করে নেব। আপনি বলেন।
শেখ হাসিনা: যারা মাইনাস টু করতে চেয়েছিল, তাদেরকে আবার সুযোগ দিতে চান কেন?
খালেদা জিয়া: আমি দিতে চাই না। সেটা আপনি দিতে চান। আপনি যে ভাষায় কথা বলেন।
শেখ হাসিনা: না, আপনি তো খুব মধুর ভাষায় কথা বলছেন।
খালেদা জিয়া: আপনি যে ভাষায় কথা বলেন সে জন্য আমরা আপনার বক্তব্য শুনিই না।
শেখ হাসিনা: আমরা যেটা চাচ্ছি যে পার্লামেন্টে আমরা আছি। পার্লামেন্টে আমরা যেহেতু আছি কখনো আপনি অপোজিশনে, কখনো আমি অপোজিশনে। কখনো আমি সরকারে কখনো আপনি সরকারে। আমরা যা করব, পার্লামেন্টের ভেতরেই করব।
খালেদা জিয়া: না না, আপনার মিটিংয়ের সময় তো আপনি নষ্ট করছেন। আপনার মিটিংয়ের টাইম তো আমি নষ্ট করতে চাই না। আপনার তো মিটিংয়ে যাওয়ার কথা। আপনি দেরি করছেন তো। আপনার মিটিংয়ের দেরি আমি করতে চাচ্ছি না। এভাবে সব কথা হয় না।
শেখ হাসিনা: হরতালটা উইথড্র করে দেন।
খালেদা জিয়া: না, আপনি বলেন আগে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। এটা নিয়ে আলোচনা হবে। তাহলে আমি হরতাল উইথড্র করে নেব।
শেখ হাসিনা: এটা নিয়ে তো যখন কথা হবে তখন আলোচনা হবে আপনাদের সঙ্গে ।
খালেদা জিয়া: আলোচনা তো কোন কোন ব্যক্তি নিরপেক্ষ হবে, নির্দলীয় কে ,কী হবে, আপনার ফর্মুলা থাকবে না আমরা ফর্মুলা থাকবে—এগুলো নিয়ে তো আরও অনেক আলোচনা বাকি আছে।
শেখ হাসিনা: আপনি নিজের দলের লোকের ওপর ভরসা করেন না?
খালেদা জিয়া: আমার দলের লোকের ওপর আমার ভরসা আছে। আপনি যদি বলেন যে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে রাজি আছেন তাহলে কালকেই আমি হরতাল উইথড্র করে দেব। রাতের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে দেব হরতাল উইথড্র হবে। আমরা কালকেই আপনার সঙ্গে আলোচনায় বসব। কোনো অসুবিধা নেই। আপনি শুধু এটুকু বলেন।
শেখ হাসিনা: আপনি সর্বদলীয়টা মেনে নেন।
খালেদা জিয়া: না। সর্বদলীয় মানা যায় না। সর্বদলীয় মানা যায় না।
শেখ হাসিনা: পরে আবার কাকে আনবেন, ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন হয়ে যাবে। আপনি আর ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন সৃষ্টি করেন না। বরং যা করি আমরা নিজেরা নিজেরা করি।
খালেদা জিয়া: আমি কিছুই করতে চাই না। আপনি নির্দলীয় সরকারে রাজি হলে বলেন, নাহলে আপনি ৩০ তারিখের পরে ডেট দেন। আমি করব। হরতাল প্রত্যাহার হবে না। ২৯ তারিখের পরে ডেট দেন। আমি আলোচনা করব।
শেখ হাসিনা: আমি ২৮ তারিখে আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি। আপনি আসেন।
খালেদা জিয়া: আমি ২৮ তারিখে যেতে পারব না। হরতালের মধ্যে আমি কোথাও যাই না।
শেখ হাসিনা: কাদেরকে আনবেন বলেন। আপনি ২৮ তারিখে আসেন।
খালেদা জিয়া: ২৮ তারিখে আমি যাব না। হরতাল প্রত্যাহার হবে না। আপনি যদি ৩০ তারিখে রাজি থাকেন ...
শেখ হাসিনা: ধন্যবাদ। আপনি ভালো থাকেন।