চরবাসীর বাধায় ব্রহ্মপুত্র নদ খননের কাজ বন্ধ

শেরপুর সদর উপজেলার ডাকপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের খননকাজে গতকাল রোববার দুপুরে বাধা দিয়েছেন নদসংলগ্ন চরবাসী। এ সময় চরবাসীর হামলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ (পাউবো) প্রশাসন ও পুলিশের সাত কর্মকর্তা আহত হন। পরে খননকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আহত কর্মকর্তারা হলেন পাউবো, জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী, পাউবো, শেরপুরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম ও উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আলী আফরোজ, শেরপুরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান মিয়া, সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম ও সার্ভেয়ার মো. শহিদুল ইসলাম। তাঁরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন, পাউবো, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাউবোর উদ্যোগে নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের আড়াই কিলোমিটার এলাকা খননের কাজ হাতে নেওয়া হয়। গতকাল সকাল ১০টার দিকে পাউবোর কর্মকর্তারা ড্রেজার (খননযন্ত্র) নিয়ে ব্রহ্মপুত্র সেতুসংলগ্ন ডাকপাড়া এলাকায় খননকাজ শুরু করেন। নিরাপত্তার স্বার্থে এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যসহ শেরপুর জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর ১২টার দিকে ডাকপাড়া গ্রামের তিন-চার শ চরবাসী দা, ফলা, লাঠি, বল্লম, কিরিচসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সেখানে গিয়ে খননকাজ বন্ধের দাবি জানান। একপর্যায়ে তাঁরা পাউবো ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালান। এতে সাত সরকারি কর্মকর্তা আহত হন। পরে জামালপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে খননকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
চরবাসীর দাবি, ব্রহ্মপুত্র নদের চরের জমি তাঁদের এবং তাঁরা কয়েক যুগ ধরে সেখানে বসবাস ও চাষাবাদ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে তাঁরা সেখানে পাট ও সবজি আবাদ করেছেন। এখন নদ খনন করলে তাঁরা (চরবাসী) ভিটেমাটিহারা হবেন ও তাঁদের ফসলি জমি বিনষ্ট হবে।
পাউবোর প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খননকাজ বন্ধ থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। এতে শুকনো মৌসুমে সেচ-সংকটসহ নৌ-চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এলাকাবাসীর বাধার মুখে তাঁরা সাময়িকভাবে খননকাজ বন্ধ রেখেছেন। জেলা প্রশাসক এ এম পারভেজ রহিম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের চরের জমি সরকারের খাস সম্পত্তি। সেখানে প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে কিছু লোক চাষাবাদ করেছেন। শেরপুরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নদের খননকাজ শুরু করা হয়েছিল। এ জন্য চরের ১৬২ জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু তাঁরা ক্ষতিপূরণ না নিয়ে খননকাজে বাধা দিয়েছেন। বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে (ক্যাবিনেট ডিভিশন) জানানো হয়েছে।
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল করিম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, খননকাজে বাধা দেওয়া ও সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনায় পাউবোর পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।