বাকল তুলে সামাজিক বনায়নের গাছ নিধন

প্রথমে শাবল দিয়ে গাছের ছাল-বাকল তোলা হয়। বাকলছাড়া গাছটি কয়েক মাসের মধ্যে মরে যায়। পরে সুযোগ বুঝে মরা গাছটি কেটে নেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জের ভৈরব-মেন্দিপুর সড়কের সামাজিক বনায়নের গাছগুলো এভাবে কেটে নিচ্ছেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা।
ভৈরব উপজেলার ভৈরব-মেন্দিপুর সড়কটির দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকা অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সড়কের দুই পাশে বনায়ন করে। সহস্রাধিক গাছের মধ্যে রেইনট্রি ও কড়ইগাছ বেশি।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার দেখা যায়, সড়কটির অধিকাংশ গাছের বাকল কম-বেশি তুলে ফেলা হয়েছে। কেটে নিতে গাছে চিহ্নও দেওয়া হয়েছে কোনো কোনো স্থানে। সাদেকপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর-তেয়ারিচর অংশের দেড় কিলোমিটার এলাকার কোনো গাছের বাকল নেই বললেই চলে। এর বেশ কিছু গাছ ইতিমধ্যে মরে গেছে। আরও কিছু শুকিয়ে যাচ্ছে।
সড়কের গাছ রক্ষণাবেক্ষণের কাজে জড়িত ব্যক্তিরা বলেন, সামাজিক বনায়নের এ গাছগুলো থেকে যে আয় হবে, তা সরকার, প্রশিকা ও তদারককারীরা পাবেন। তিন বছর আগে রাতের অন্ধকারে গাছ চুরি হতো। প্রকাশ্যে গাছের ডালও কেটে নেওয়া হতো। এ অবস্থায় প্রশিকা প্রতিনিধি এবং প্রশাসন গাছ রক্ষায় উদ্যোগী হয়। তাঁদের তৎপরতায় কিছুদিন গাছ কাটা বন্ধ ছিল। স্থানীয় লোকজন বুঝতে পারলেন, জীবিত গাছ আর কাটা যাবে না। তাই তাঁরা গাছের বাকল তোলা শুরু করলেন। এ পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত ভবানীপুর-তেয়ারিচরসহ আশপাশের শতাধিক গাছ মেরে ফেলা হয়েছে।
সড়কের পাশের অনেক বাসিন্দা জানান, তাঁরা গাছের ছাল-বাকল তোলেন না। তবে বজ্রপাত, ঝড়, বৃষ্টি ও রোদে বাকল উঠে গেলে তাঁরা সেটা ব্যবহার করেন। উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের সুলায়মানপুর গ্রামটি সড়ক লাগোয়া। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি ঘরে রান্না চলছে গাছের শুকনো ছাল-বাকলে। ওই গ্রামের জানুয়ারা বেগম (৫০) বলেন, ‘কী কন গজইব্বা কথা! আমরা তুলুম কেন? ছাল ওঠে ঠাডা (বজ্রপাত) পইড়া।’
ভবানীপুর-তেয়ারিচর অংশের গাছ রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত প্রশিকা প্রতিনিধি তাজুল ইসলাম বলেন, শরীরের চামড়া তুলে ফেললে কি মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব? বাকল হলো গাছের চামড়া। ফলে সেটা তুলে ফেললে যা হওয়ার তাই হয়। তিনি আরও বলেন, আইনি সমস্যা এড়াতে স্থানীয় কিছু সুযোগসন্ধানী লোক ছাল-বাকল তুলে গাছ মারছেন। কোনোভাবেই চক্রটিকে থামানো যাচ্ছে না। দুই বছরে অন্তত ১০০ গাছ সড়ক থেকে নাই হয়ে গেছে। এতে তাঁরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হবেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তারের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) চিত্রা শিকারি জানান, তিনি ভৈরবে যোগ দিয়েছেন কয়েক দিন হলো। তাই বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন। অভিযোগ সত্য হলে গাছ রক্ষায় ব্যবস্থা নেবেন।