লোকবল-সংকট, নষ্ট হচ্ছে চিত্রকর্ম

লোকবল-সংকটের কারণে নানা সমস্যায় জর্জরিত এস এম সুলতান কমপ্লেক্স। অযত্ন-অবহেলায় শিল্পীর দুর্লভ চিত্রকর্ম নষ্ট হতে চলেছে। ছয় বছর আগে শিল্পীর বাগানবাড়িতে সুলতান আর্ট কলেজ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও এখনো সেটি নির্মিত হয়নি।
গত রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, সংরক্ষণের নামে শিল্পীর নৌকাটি অরক্ষিত অবস্থায় নিরাপত্তাবেষ্টনীর বাইরে চিত্রা নদীর তীরে টিনের ছাউনির নিচে রাখা হয়েছে। শিশুরা নৌকার ওপর লাফালাফি করছে। নৌকায় ঘুণে ধরেছে। মাকড়সা বাসা বেঁধেছে। বর্তমানে তিনজন আনসার সদস্য কমপ্লেক্সের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। মালি গোলাপ হোসেন সংগ্রহশালার আঙিনায় ঝাড়ু দিচ্ছেন। শিল্পীর সমাধিতে ঘষামাজার কাজ চলছে। স্থানীয়রা জানান, শিল্পীর সংগ্রহশালাটি ছয়-সাত মাস ধরে বন্ধ।
জেলা প্রশাসন ও গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিল্পীর মৃত্যুর পর তাঁর শিল্পকর্ম সংরক্ষণে নড়াইল শহরতলির মাছিমদিয়ায় ২ একর ৫৭ শতক জমিতে সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় আটটি অবকাঠামো বাস্তবায়নে গণপূর্ত বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। অবকাঠামোগুলো হচ্ছে আর্ট গ্যালারি ভবন, শিশুস্বর্গ ভবন, প্রধান ফটকসহ সীমানাপ্রাচীর, শিল্পীর বাসভবন সংস্কার ও কবর পাকা করা, শিল্পীর পালিত কন্যা নিহার বালার বসবাসের জন্য টিনের একটি ঘর নির্মাণ ইত্যাদি।
২০০০ সালের জুলাইয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০০৩ সালের জুনে শেষ হয়। সংগ্রহশালা পরিচালনার জন্য ওই বছরের জুনে প্রকল্পের আওতায় দুজন কর্মকর্তা ও আটজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে তাঁদের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতে নেওয়ার কথা থাকলেও তা আর করা হয়নি। একপর্যায়ে তাঁরা সংগ্রহশালা ছেড়ে চলে যান।
এদিকে শিল্পীর মৃত্যুর পর ২০০৯ সালের ১০ আগস্ট সুলতানের বাগানবাড়ি নড়াইল পৌরসভার মাছিমদিয়া গ্রামে এস এম সুলতান আর্ট কলেজের (পরবর্তী সময়ে এস এম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ছয় বছর পার হলেও কলেজের অবকাঠামো নির্মিত হয়নি।
কলেজের অধ্যক্ষ অশোক কুমার শীল বলেন, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমানে এর কার্যক্রম চললেও কলেজটি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীরা শিশুস্বর্গের হলরুমে ক্লাস করছে।
এদিকে শিশুস্বর্গের নিয়োগপ্রাপ্ত দুজন শিক্ষকই মারা যাওয়ার পর নতুন কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বাইরে থেকে একজন এসে পাঠদান করছেন। সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার দুরবস্থার কথা স্বীকার করে জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমি যশোরে থাকি। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে সপ্তাহে দুই দিন নড়াইলে যেতে হয়।’
জেলা প্রশাসক হেলাল মাহামুদ শরীফ বলেন, ‘সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালায় লোকবল-সংকটসহ সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। সংগ্রহশালায় লোকবল নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।’