তাজউদ্দিনকে বিদেশে পাঠান কিছু গোয়েন্দা কর্মকর্তা

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর ঘটনাস্থল l ফাইল ছবি
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর ঘটনাস্থল l ফাইল ছবি

২১ আগস্ট হামলার জন্য আর্জেস গ্রেনেড সরবরাহকারী মাওলানা তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার কিছু কর্মকর্তা নয় বছর আগে তাজউদ্দিনকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হয় যে তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন। কেবল তাজউদ্দিন নয়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি তাঁর আরেক ভাই রাতুল বাবুও ওই দেশে আছেন বলে বিভিন্ন সময় খবর বেরিয়েছে।
এরই মধ্যে তাজউদ্দিনকে ফেরত পাঠাতে দক্ষিণ আফ্রিকা রাজি হয়েছে বলে গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন। বুধবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনদিয়া ফেকেতোর নেতৃত্বে সে দেশের সফররত একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সরকারি বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা মাওলানা তাজউদ্দিনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে রাজি হয়েছে এবং এ জন্য তারা বাংলাদেশের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি করতে চায়।

তাজউদ্দিন
তাজউদ্দিন


জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন লেখাপড়া করেছেন পাকিস্তানের লাহোরে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, তাজউদ্দিন পাকিস্তানে লেখাপড়াকালে কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবা, তেহরিক-ই-জিহাদ আল ইসলাম ও হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে জড়িত হন। তাঁর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
সাক্ষীদের জবানবন্দি ও আসামিদের স্বীকারোক্তি থেকে প্রকাশ পায় যে ২০০৩ সালে কাশ্মীরভিত্তিক সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট ও তেহরিক-ই-জিহাদ আল ইসলাম নেতা মুজ্জাফর শাহ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি হান্নান ও মাওলানা তাজউদ্দিনের বাংলাদেশে আসে। তারা পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড ও গুলি আনে। এই গ্রেনেডের একটা অংশ মুফতি হান্নান তাঁর সহযোগীদের মাধ্যমে ভারতে পাঠান। কিছু গ্রেনেড মুফতি হান্নান ও মাওলানা তাজউদ্দিন নিজেদের কাছে রেখে দেন।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলার আগের দিন মুফতি হান্নানের সহযোগী আহসান উল্লাহ ও মুফতি মঈন ওরফে জান্দাল তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডির বাসায় যান। তাঁদের ১৫টি গ্রেনেড দেন তাজউদ্দিন। আর, এই গ্রেনেড দিয়েই পরদিন শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলা চালানো হয়।
তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি সূত্রগুলো বলছে, ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর মুফতি হান্নান গ্রেপ্তার হন। এরপর তিনি ১২০ দিন র্যাবের হেফাজতে রিমান্ডে ছিলেন। মুফতি হান্নান তখনই তাজউদ্দিনের নাম বলেছিলেন। মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) জঙ্গি দমনসংক্রান্ত সেলের কতিপয় কর্মকর্তা ২০০৬ সালের ১০ অক্টোবর তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেন।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতসারে ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (পরবর্তী সময়ে মেজর জেনারেল হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত) এ টি এম আমিন, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সাইফুল ইসলাম ডিউক পরস্পর যোগসাজশে তাজউদ্দিনকে বিদেশ পাঠিয়ে দেন।