মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় আবুল মনসুর আজও সমকালীন

আবুল মনসুর আহমদ
আবুল মনসুর আহমদ

আবুল মনসুর আহমদ এমনই বিরল একজন ব্যক্তিত্ব যিনি একই সঙ্গে রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সাহিত্য-এ তিন ধারার সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন আশ্চর্য নিপুণতার সঙ্গে। ব্যঙ্গ (স্যাটায়ার) ও রঙ্গের (উইট) অপূর্ব মিশেলে তাঁর রচনাগুলো পাঠকের সামনে তৎকালীন সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতার যে চিত্র হাজির করে তা এখনো প্রাসঙ্গিক। এ অর্থে তাঁর রচনা যুগোত্তীর্ণ। আর নতুন প্রজন্মের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় তিনি আজও সমকালীন।
বাংলা সাহিত্যের বিদ্রূপাত্মক রচয়িতা, সাংবাদিক ও রাজনীতিক আবুল মনসুর আহমেদের ১১৭ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তাঁকে এ ভাবেই মূল্যায়ন করেন বক্তারা। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আবুল মনসুর আহমদ জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন পরিষদ এ সভাটি আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আবুল মনসুর আহমদের সব কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দিষ্ট ছিল মানুষের চেতনাকে জাগিয়ে তোলা আর বৃহত্তর সমাজের কল্যাণ। তাঁর জীবন ও রচনা থেকে নতুন করে শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও আবুল মনসুর আহমদের ছেলে মাহফুজ আনাম তাঁর পিতা সম্পর্কে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন লেখক-সাহিত্যিকের মূল্যায়ন তুলে ধরেন। আলোচনা করেন তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন, লেখক সত্তা ও ব্যক্তি আবুল মনসুর আহমদ সম্পর্কে। বলেন, ‘মর্যাদার প্রশ্নে তিনি (আবুল মনসুর আহমদ) কখনো আপস করেননি। আত্মপরিচয় ও আত্মচেতনাকে তিনি সব সময় সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখেছেন। যদি আপনারা ওনার লেখা পড়েন তাহলেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে।’
নাট্যব্যক্তিত্ব ম. হামিদ বলেন, ‘আমরা মূল্যবোধের সংকট নিয়ে কথা বলি। কিন্তু এটি কীভাবে তৈরি হবে সেটা অনালোচিত থেকে যায়। আবুল মনসুর আহমদ এখানেও পথ দেখিয়েছেন।’
আলোচনার সভাপতি সাংবাদিক রাহাত খান তাঁকে অভিহিত করেন ‘বিচিত্রগামী’ মানুষ হিসেবে। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. শফিকুর রহমান, সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর, আইটি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার প্রমুখ। বক্তারা নতুন প্রজন্মকে আবুল মনসুর আহমদের রচনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে তাঁর রচনা ও জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তোলেন।
১৯৪৬-এ অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ-এর সম্পাদক এবং তৎকালীন কৃষক ও নবযুগ পত্রিকায়ও কাজ করেন আবুল মনসুর আহমদ। তিনি শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৭ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আওয়ামী লীগ সরকারের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ছিলেন।

তাঁর রচনার মধ্যে রয়েছে আয়না, আসমানী পর্দা, গালিভারের সফরনামা ও ফুড কনফারেন্স। আত্মজীবনীমূলক দুটি গ্রন্থ আত্মকথা ও আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর। আরও রয়েছে বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের ওপর বিখ্যাত রচনাবলি।

পাকিস্তানের প্রথম দিকে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির একজন নেতা। ১৯৫৪-এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের মেনিফেস্টো ‘একুশ দফা’র রচয়িতা তিনি-যে নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পূর্ববাংলার ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়। রাজনৈতিক কারণে তাঁকে পঞ্চাশ দশকের শেষ দিকে ও ষাটের দশকের প্রথম দিকে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়। বাংলা একাডেমি সম্প্রতি আবুল মনসুর আহমদ রচনাসমগ্র নিয়ে তিন খণ্ড প্রকাশনা করেছে। আরও তিন খণ্ড প্রকাশিতব্য রয়েছে।