কসবায় রেলসেতু দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সালদা নদীতে পারাপারের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ ঝুঁকি নিয়ে রেলওয়ের সেতু দিয়ে​ পার হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সালদা নদীতে পারাপারের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ ঝুঁকি নিয়ে রেলওয়ের সেতু দিয়ে​ পার হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সালদা নদীতে রেলওয়ের ১৬১ নম্বর সেতু এলাকায় মানুষের পারাপারের বিকল্প ব্যবস্থা নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেলসেতু দিয়ে নদী পারাপার হতে হয় লোকজনকে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।
স্থানীয় ও রেলওয়ে সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়াকে পৃথক করেছে সালদা নদী। এ নদীর দক্ষিণ পারে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের একটি স্টেশন। এ নদী পার হওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওই রেলসেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজার খানেক মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ২০০৫ সালের আগে রেলসেতু পারাপারের বিকল্প হিসেবে রেলওয়ের ইজারাকৃত নৌকার ব্যবস্থা চালু ছিল। তবে ১০ বছর ধরে পারাপারের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা স্টেশনে আসে। ১৯৯৮ সালে সেতুটি পার হতে গিয়ে পৃথক পাঁচটি দুর্ঘটনায় তিন নারীসহ পাঁচজন মারা যান।
সালদা নদী রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি এ সেতু দিয়ে ট্রেন আসতে দেখে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পাঁচজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে একজন মারা যান। একই বছর গঙ্গানগর গ্রামের হাসু মিয়া সেতু পার হতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা যান। এ বছর পৃথক ঘটনায় আরও দুজন মারা যান।
সূত্র জানায়, সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী জালালাবাদ এক্সপ্রেস, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী কর্ণফুলী ট্রেন দুটি এ স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। এখানে স্টেশন থাকলেও কোনো মাস্টার নেই। মাত্র একজন কর্মচারী (পোর্টার) দিয়ে চলছে স্টেশনের কার্যক্রম। ফলে এ স্টেশনে কোনো টিকিট বিক্রি হয় না।
সালদা নদী রেলস্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী (পোর্টার) মো. নবী হোসেন বলেন, নদীটি পারাপারের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে স্টেশনে যাতায়াত করতে হয়। এ স্টেশনে তিনটি ট্রেনের যাত্রাবিরতি আছে। তবে স্টেশনমাস্টার না থাকায় টিকিট বিক্রি হয় না। তিনি বলেন, সেতুটি পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রায় প্রতিবছরই দু-একজন মারা যান।
কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. মনিরুল হক বলেন, নদীটির উত্তর পাশে রেললাইনে বাঁক থাকায় সেতু পারাপারের সময় ট্রেন আসছে কি না, তা বোঝা যায় না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।
বায়েক ইউপির চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, বিকল্প সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সাংসদ, আইনমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। তিনি সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
রেলওয়ের কুমিল্লা অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হামিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সালদা নদীর ওপর রেলওয়ের ১৬১ নম্বর সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৮০ ফুট। এ সেতু দিয়ে লোক চলাচলের কোনো ব্যবস্থা নেই। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সেখানে বিকল্প সেতু নির্মাণের কোনো পরিকল্পনাও নেই।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সহকারী একান্ত সচিব রাশেদুল কায়সার ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, রেলসেতুটির বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে একটি সেতু নির্মাণের প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে। এখন শুধু অনুমোদনের অপেক্ষা আছে।