আসছে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় গরু

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কুড়িগ্রাম সীমান্তবর্তী যাত্রাপুর সীমান্ত হাটে বসেছে ভারতীয় গরুর হাট। হাটে তোলার আগে খোঁয়াড় থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কুড়িগ্রাম সীমান্তবর্তী যাত্রাপুর সীমান্ত হাটে বসেছে ভারতীয় গরুর হাট। হাটে তোলার আগে খোঁয়াড় থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এক মাস ধরে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় গরু-মহিষ আসছে। এর ফলে জেলার সীমান্ত হাটগুলো ভারতীয় গরু-মহিষে সয়লাব হয়ে গেছে। আর এসব গবাদিপশুর মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। সীমান্ত দিয়ে আসা প্রতিটি গবাদিপশু ৫০০ টাকার বিনিময়ে কাস্টম বিভাগের মাধ্যমে করিডরে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে।

হঠাৎ করে ভারত থেকে গবাদিপশু আসতে থাকায় গত কয়েক মাসের তুলনায় কুড়িগ্রামে গরুর দাম কমতে শুরু করেছে। এতে আসন্ন ঈদুল আজহায় ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়ছেন স্থানীয় খামারিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পশু আসছে নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, ভূরুঙ্গামারী, সদর ও রৌমারী সীমান্ত দিয়ে। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত পার হয়ে এসব পশু বাংলাদেশে আসছে। স্থানীয় কয়েক শ কিশোর ও যুবক ভারত সীমান্ত দিয়ে পশুপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এসব গরু নিয়ে আসছেন। সীমান্ত পার হওয়ার পর এসব পশু খাটালে (পশু জড়ো করার স্থান) রাখা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম খাটালের তত্ত্বাবধায়ক ইবনে আকবর দুলাল জানান, জেলার কমপক্ষে ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে গবাদিপশু আসছে। এরপর খাটালে জড়ো হওয়া গরুর একটি তালিকা তৈরি করে তা করিডরে পাঠানো হচ্ছে। করিডরে পশুপ্রতি ৫০০ টাকা করে শুল্ক দিতে হয়। আর এর পুরোটাই দেখভাল করে বিজিবি ও কাস্টমস।

কুড়িগ্রাম কাস্টমস পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম বলেন, জেলার ধরলা ব্রিজ পয়েন্ট ও রৌমারী পয়েন্ট দিয়ে চলতি মাসের গত বুধবার পর্যন্ত ৯ দিনে ৩৫ হাজার ১৪৭টি ভারতীয় গবাদিপশু করিডর করা হয়। তবে এসব গবাদিপশুর মূল্য কীভাবে পরিশোধ করা হয় তা তিনি জানেন না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর দেশে প্রায় সব ধরনের মাংসের দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। এ কারণে গরু, মহিষ ও ছাগলের দামও কিছুটা বেড়েছে। হঠাৎ করে সীমান্ত দিয়ে অবাধে গরু-মহিষ আসতে থাকায় আবার দাম পড়ে যাচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সদর এলাকার কয়েকজন খামারি জানান, কোরবানির ঈদে গবাদিপশুর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। এ কারণে ঈদের আগে তাঁরা ছোট গরু ক্রয় করে পালন শুরু করেছিলেন ভালো দাম পাওয়ার আশায়। এখন মূল খরচ উঠবে কি না তা নিয়েই তাঁরা সন্দিহান।

কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার খামারি মোজাম্মেল হোসেন সাবেরী বলেন, ৩০টি গরু নিয়ে তাঁর খামারে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। আশা ছিল এসব গরু বিক্রি হবে প্রায় নয় লাখ টাকায়। কিন্তু ভারতীয় গরুর কারণে এখন বাজারমূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশি খামার বন্ধ হয়ে যাবে।

কুড়িগ্রাম ৪৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল জাকির হোসেন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে গরু আসা বেড়েছে।