উন্নয়ন নেই, তাই ধুঁকছে

মরিচা পড়ে জীর্ণ হয়ে​ গেছে সিংহের খাঁচার লোহার জাল। স্থানে স্থানে গেছে ভেঙে। ভাঙা জায়গাগুলো আবার তার দিয়ে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে রাখা হয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো
মরিচা পড়ে জীর্ণ হয়ে​ গেছে সিংহের খাঁচার লোহার জাল। স্থানে স্থানে গেছে ভেঙে। ভাঙা জায়গাগুলো আবার তার দিয়ে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে রাখা হয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো

রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানাটি রংপুর নগরের একমাত্র সরকারি বিনোদনকেন্দ্র। প্রতিদিন শিশু-কিশোরসহ শত শত মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। কিন্তু উন্নয়নের অভাবে ধুঁকছে ২৪ বছরের পুরোনো এ প্রতিষ্ঠান।

চিড়িয়াখানার পশুপাখির খাঁচাগুলোয় মরিচা পড়ে গেছে। উদ্যানে দর্শনার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত ছাউনি নেই। লেকের পানি ও পাড় ভরে গেছে ময়লা-আবর্জনায়। নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বিরক্ত দর্শনার্থীরা।

ঘড়িয়ালের খাঁচায় নেই পানি
ঘড়িয়ালের খাঁচায় নেই পানি

অভিযোগ আছে, চিড়িয়াখানা থেকে প্রতিবছর বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় হলেও এখানে উন্নয়নের তেমন ছোঁয়া লাগেনি। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, উন্নয়নের জন্য তেমন বরাদ্দ পাওয়া যায় না। তা ছাড়া অর্থ বরাদ্দের অধিকাংশই চলে যায় পশুপাখির খাবারের পেছনে। ফলে খাঁচা সংস্কার ও লেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে তেমন বরাদ্দ থাকে না।
নগরের প্রাণকেন্দ্র পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে ১৯৯১ সালে ২৩ একর জমির ওপর এই বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানাটি তৈরি করা হয়। ২৩ প্রজাতির ১৮৪টি পশুপাখি রয়েছে এখানে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে চিত্রা হরিণ, ৩৪টি। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে সিংহ দুটি, বাঘ একটি, হায়েনা দুটি, বানর আটটি, বেবুন চারটি, শকুন চারটি, ইমু দুটি, অজগর একটি, চিল দুটি, ইগল দুটি, স্থল কাছিম একটি, ঘড়িয়াল চারটি ও ভুটানি গরু পাঁচটি।

লেকের একটিমাত্র স্পিডবোট, তা–ও নষ্ট
লেকের একটিমাত্র স্পিডবোট, তা–ও নষ্ট

উদ্যান ও চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, প্রতিবছর তিনটি খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় প্রায় ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে গেট থেকে ৩২ লাখ টাকা এবং শিশুপার্ক ও লেক থেকে ৬ লাখ টাকা করে আয় হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পশুপাখির খাঁচাগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেহাল সিংহের খাঁচা। লোহার জালে মরিচা পড়ে অনেক স্থান ভেঙে গেছে। মরিচায় দুর্বল হয়ে গেছে শিকগুলো। বাঘ ও বানরের খাঁচারও একই অবস্থা। সিংহের খাঁচার ভাঙা অংশ মোটা জিআই তার দিয়ে কোনোরকমে সংস্কার করা হয়েছে। চারটি ঘড়িয়াল থাকলেও এগুলোর খাঁচায় পানি খুবই কম। এখানকারএকমাত্র লেকে ভাসছে ময়লা। পাড়েও ময়লা-আবর্জনা। ফলে দুর্গন্ধে বসা যায় না সেখানে। লেকে একটি স্পিডবোট থাকলেও তা বিকল। এত বড় চিড়িয়াখানায় মাত্র দুটি যাত্রী ছাউনি। একেকটিতে ২০ জনের বেশি জায়গা হয় না। ফলে বৃষ্টি হলে বেশির ভাগ দর্শনার্থীকে ভিজতে হয়। কাউনিয়া থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা বিলকিছ বেগম বলেন, বৃষ্টির মধ্যে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভিজতে হয়েছে।

এসব বিষয়ে চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর নাসির উদ্দিন খান বলেন, উন্নয়নে তেমন বরাদ্দ পাওয়া যায় না। তবে পশুপাখির খাবারের জন্য বছরে ১৫ থেকে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এ বছর লেকের ধার উন্নত করতে ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তা দিয়ে খুব শিগগির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করা হবে।