১৮ দিনে নদীতে বিলীন সহস্রাধিক স্থাপনা

যমুনা নদীর পানি কমে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। আজিমুদ্দিন এলাকা থেকে গত রোববার তোলা ছবি l প্রথম আলো
যমুনা নদীর পানি কমে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। আজিমুদ্দিন এলাকা থেকে গত রোববার তোলা ছবি l প্রথম আলো

যমুনা নদীর পানি কমে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১৮ দিনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সহস্রাধিক স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
চৌহালী পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে যমুনা নদীতে পানি বাড়ে। এতে পূর্বপাড়ের খাসকাউলিয়া থেকে ভাটির দিকে ভাঙন শুরু হয়। উপজেলা সদরের আজিমপুর মোড়ের প্রাণিসম্পদ ভবন, উত্তর খাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজাজুরিয়া নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়সহ সহস্রাধিক স্থাপনা নদীগর্ভে চলে যায়। একই সঙ্গে খাসকাউলিয়ার খগেন ঘাট, তেকির মোড় ও আজিমুদ্দিনের মোড়—এ তিনটি বাজার এলাকা সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়। বর্তমানে পানি কমতে শুরু করলেও ভাঙন অব্যাহত আছে। উপজেলা সদরের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় এখন চৌহালী ডিগ্রি কলেজে। এই কলেজ ও আলিয়া মাদ্রাসা মোড়ের ৫০ মিটারের মধ্যে যমুনা নদী চলে এসেছে। একই সঙ্গে খাসকাউলিয়া ইউনিয়ন থেকে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চর সলিমাবাদ পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ বাড়ির গাছপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে অনেকের ঘরের মালপত্র স্তূপ করে রাখা। উপজেলার পশ্চিম অংশে সদিয়া চাঁদপুর এলাকায় তুলনামূলক কম ভাঙন ধরেছে।
খাসকাউলিয়া ইউনিয়নের আজিমুদ্দিনের মোড় এলাকার রহিমা খাতুন বলেন, ভাঙনে তাঁর বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। এখন তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
খাসকাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গণী মোল্লা বলেন, গত আগস্ট মাসে পাউবো ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি।
চৌহালী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জুয়েল সরকার জানান, ভাঙতে ভাঙতে এখন শুধু সদরের জোতপাড়া বাজারটি আছে। সেটিও কিছুদিনের মধ্যে ভেঙে যাবে। বিলীন হবে চৌহালী ডিগ্রি কলেজ ও আলিয়া মাদ্রাসা।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে পূর্বাংশে পাঁচটি ইউনিয়ন। এর মধ্যে খাসকাউলিয়া ও খাসপুকুরিয়া ইউনিয়নের মাত্র এক-চতুর্থাংশ টিকে আছে।
চৌহালী টাঙ্গাইল জেলা পাউবো কার্যালয়ের অধীন। এ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী বলেন, এ উপজেলাকে নদীভাঙন থেকে রক্ষায় আগস্ট পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি টাকার কাজ করা হয়, যা সাম্প্রতিক সময়ে নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পানি কমে যাওয়ায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখন ভাঙনরোধের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে বন্যা ও নদীভাঙন রোধে প্রথম পর্যায়ে ১১৪ কোটি টাকায় পাঁচ কিলোমিটার স্থায়ী তীর সংরক্ষণ বাঁধের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসে ওই কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া উজানে আরও চার কিলোমিটার স্থায়ী তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজের জন্য অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।