হরতালের নামে বিএনপির চাঁদাবাজি!

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ডাকা চলমান হরতালে খরচ জোগানোর অজুহাতে লালমনিরহাট সদরের মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের সাতপাটকি গ্রামে সংখ্যালঘুদের কাছে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদা না দেওয়ায় বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত যুবকেরা গ্রামের পাঁচ বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও মারপিট করে। গত সোমবার দুপুরে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
রাত ১১টার দিকে এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানায় মামলা হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো তৎপরতার সঙ্গে দলের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হরতালের খরচ চালাতে এলাকায় বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচিত শাওন (২৫) ও আলমগীরের (২৫) নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গ্রামের নিখিল চন্দ্র রায়ের বাড়িতে গিয়ে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। নিখিল তা দিতে অস্বীকার করলে হরতাল-সমর্থকেরা তাঁকে মারধর শুরু করে।
এ সময় নিখিল দৌড়ে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে লুকালে চাঁদা দাবিকারিরা তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে তারা নিখিলের খোঁজে গ্রামের পরেশ চন্দ্র (৬০), উকিল চন্দ্র (৫০), পূর্ণ নাথের (৩৫) বাড়িতে তল্লাশি চালায়। কিন্তু নিখিলকে না পেয়ে এসব বাড়িও ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। শেষে প্রতিবেশী নেরবালার বাড়িতে নিখিলকে খুঁজে পেয়ে পিটিয়ে তাঁকে গুরুতর আহত করে হামলাকারীরা। তা ছাড়া আশ্রয় দেওয়ায় নেরবালার ঘরও ভাঙচুর করে। পরে নিখিলের আর্তচিৎকারে গ্রামবাসী ছুটে এলে হামলাকারীরা চলে যায়।
মামলার এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, এ মামলার আসামিরাই গত ৩০ অক্টোবর রাতে হরতালের খরচ জোগানোর নামে একই গ্রামের পিন কুমারের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা চাঁদা নেয়।
জেলা পূজা উদ্্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র রায় বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের খরচ জোগাতে সংখ্যালঘুদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। দাবি পূরণ না করায় এভাবে তাদের বাড়িঘরে হামলা ও মারপিটের ঘটনা দুঃখজনক। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ বলেন, ‘এর আগেও হরতালের নামে পিন কুমারের কাছ থেকে শাওন ও আলমগীরের চাঁদা আদায়ের বিষয়টি সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়। তখনই আমি বলেছিলাম, এরা বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও দুষ্কৃতি প্রকৃতির যুবক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাদের এটাও বলেছি, হরতালের নামে বা বিএনপির নামে কেউ চাঁদা বা অবৈধ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করলে তাকে বা তাদের আটক করে আমাদের অথবা পুলিশে যেন খবর দেওয়া হয়।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি জমির উদ্দিন বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং নির্যাতনের শিকার নিখিল চন্দ্রকে উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করি।’ তিনি জানান, এ ঘটনায় বিএনপির সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে ছয়জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে নিখিল চন্দ্র থানায় মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।