কার্যালয়ে ঢুকে জাগৃতির প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যা

প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে আজিজ সুপার মার্কেট থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: সাজিদ হোসেন
প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে আজিজ সুপার মার্কেট থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: সাজিদ হোসেন

জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে আজ শনিবার কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে তাঁর কার্যালয়ে ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে ভেতরে ফেলে রেখে দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়।

আরেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের লালমাটিয়ার কার্যালয়ে ঢুকে স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করার কয়েক ঘণ্টা পর জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক খুন হলেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বজনেরা। ছবি: সাজিদ হোসেন
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বজনেরা। ছবি: সাজিদ হোসেন

নিহত ফয়সালের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আজ দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ফয়সাল তাঁর সঙ্গেই বাসায় ছিলেন। পরে তিনি শাহবাগে তাঁর প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানে যান। খোঁজ নেওয়ার জন্য তিনি কয়েকবার ছেলেকে ফোন করেন। কিন্তু ছেলে ফোন ধরেননি। বিকেল চারটার দিকে তিনি আজিজ সুপার মার্কেটের তিন তলায় ১৩১ নম্বর রুমের সামনে যান। এটি তাঁর ছেলের কার্যালয়।

আজিজ সুপার মার্কেটে ঘটনাস্থলে নিহত ফয়সালের এক বন্ধুর কান্না। ছবি: সাজিদ হোসেন
আজিজ সুপার মার্কেটে ঘটনাস্থলে নিহত ফয়সালের এক বন্ধুর কান্না। ছবি: সাজিদ হোসেন
ফয়সাল আরেফিন দীপন। ছবিটি তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া।
ফয়সাল আরেফিন দীপন। ছবিটি তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া।

নিহতের বাবা আরও বলেন, ওই সময় তিনি কার্যালয়ের দরজা খুলতে গিয়ে বন্ধ পান। এ সময় কাচের দরজা দিয়ে ভেতরে আলো জ্বলতে দেখেন। ছেলে বাইরে গেছে ভেবে তখন তিনি সেখান থেকে চলে যান। পরে ছেলের বউকে ফোন করলে জানতে পারেন, দুর্বৃত্তরা লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। এই কথা শুনে তিনি লোকজন নিয়ে আবার ছেলের কার্যালয়ে গিয়ে দরজা ভেঙে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর ছেলে পড়ে আছে।
ওই অবস্থায় ফয়সাল আরেফিনকে উদ্ধার করে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সন্ধ্যা সাতটার দিকে হাসপাতালের আবাসিক সার্জন রিয়াজ মোর্শেদ তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ফয়সাল আরেফিন দীপনের স্ত্রী চিকিৎসক। তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে। তাঁর অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার্থী। আর মেয়েটি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

স্বজনের কান্না। ছবিটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতল থেকে তোলা। ছবি: সাজিদ হোসেন
স্বজনের কান্না। ছবিটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতল থেকে তোলা। ছবি: সাজিদ হোসেন


চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একুশের বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ​ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হামলায় আহত হন তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ। জাগৃতি থেকে অভিজিৎ​ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ ও ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ নামের দুটি বই প্রকাশিত হয়। আর শুদ্ধস্বর তাঁর লেখা ‘সমকামিতা: একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’ ও ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ নামে দুটি বই প্রকাশ করে।