কঠিন পরীক্ষায় তানজিলা

তার থাকার কথা পড়ার টেবিলে। নেওয়ার কথা পরীক্ষার প্রস্তুতি। কিন্তু সে আছে আরেক কঠিন পরীক্ষায়। 
কাতরাচ্ছে হাসপাতালে।
মিরপুর গার্লস আইডিয়াল কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তানজিলা তামান্না (১৭) নামের মেয়েটির দুই পা
ভেঙে গেছে বাসের ধাক্কায়। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তার চেয়ে বড়
কষ্টের খবর তাকে এখনো জানানো হয়নি। ওই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তার মা হেলেনা পারভীন।
তানজিলা বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫ পেয়েছিল সে। আরও ভালো করার আশায় ভালো
প্রস্তুতি নিয়ে সে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু করেছিল। পরীক্ষার আসন পড়েছে মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে পরীক্ষা শেষ করে মায়ের সঙ্গে রিকশাযোগে মিরপুর সেনপাড়ার বাসায় যাচ্ছিল তানজিলা।
১০ নম্বর গোলচত্বরে এলেই একটি যাত্রীবাহী বাস রিকশাটিকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। ছিটকে পড়ে গুরুতর
আহত হয় তানজিলা, মা হেলেনা ও রিকশাচালক মো. মোখলেস। হাসপাতালে নেওয়ার পর হেলেনা মারা যান।
তানজিলাকে ভর্তি করা হয় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল)। ঢাকা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন রিকশাচালক মোখলেস।
গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বেডে শুয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছে তানজিলা। দুই পায়ের হাঁটু
থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ব্যান্ডেজ করা। বাঁ চোখের পাশে গুরুতর জখম। খুনসুটি করে তানজিলাকে মাতিয়ে
রাখার চেষ্টা করছে বন্ধুরা। তানজিলা মাঝে মাঝে পায়ের দিকে তাকায়, মাঝে মাঝে হাসে।
স্বজনেরা জানান, মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি তানজিলাকে জানানো হয়নি। মেয়েটি কীভাবে সইবে মায়ের মৃত্যুর খবর
তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না।
এখন তানজিলার দুশ্চিন্তা পরীক্ষা নিয়ে। প্রথম আলোকে সে বলল, ‘আমার সব পরীক্ষা ভালো হয়েছে। তাই
যেভাইে হোক পরীক্ষা চালিয়ে যেতে চাই।’ সে জানায়, বাকি আছে আর পাঁচটি পরীক্ষা। ১৬ মে কম্পিউটার
বিষয়ে পরীক্ষা।
আকস্মিক ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন তানজিলার বাবা তোফাজ্জল। স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে গেছেন ফরিদপুর সদরে।
সেখানে গতকাল বুধবার সকালে লাশ দাফন করা হয়।
তোফাজ্জল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই সন্তানের মধ্যে তানজিলা বড়। আমি চাই, সে পরীক্ষা চালিয়ে যাক।
তাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর নড়াচড়া করাটা ঠিক হবে না। যদি
হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা হয় তাহলে আমার মেয়েটা সামনে এগোতে পারবে।’ একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন
তোফাজ্জল। বলেন, ‘ভাই, আপনারা একটু ব্যবস্থা করেন।’
জানতে চাইলে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মুশতারি আহমেদ বলেন, ‘তানজিলা যদি পরীক্ষা
দিতে চায়, তাহলে আমরা হাসপাতালে তার পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করব।’