বেড়া দিয়ে মাছ শিকার

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পুণ্ডুরিয়া গ্রামে কাগেশ্বরী নদীতে আড়াআড়ি বাঁশের বেড়া নির্মাণ করে সুতি জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পুণ্ডুরিয়া গ্রামে কাগেশ্বরী নদীতে আড়াআড়ি বাঁশের বেড়া নির্মাণ করে সুতি জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় কাগেশ্বরী নদীর সাতটি স্থানে বাঁশের বেড়া নির্মাণ করে সুতি জাল দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে শুধু প্রাকৃতিক মাছই নয়, ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রাকৃতিক জলাশয়ে অবমুক্ত করা দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনা।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার সাঁথিয়ার সোনাই, গাঙভাঙা, আড়িয়াডাঙ্গিসহ কয়েকটি বিলে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ১ হাজার ৪৪১ কেজি বিভিন্ন মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই পোনাগুলো ছাড়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল পোনাগুলো যেন প্রাকৃতিক মাছের সঙ্গে বেড়ে ওঠে। অথচ এই পোনাগুলো বিলের অন্যান্য প্রাকৃতিক মাছের সঙ্গে স্রোতের টানে কাগেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়ছে। আর সেখানে অবৈধ মাছ শিকারিদের পাতা সুতি জালে সেগুলো প্রাকৃতিক পোনাসহ বিভিন্ন আকারের মাছের সঙ্গে ধরা পড়ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, কাগেশ্বরী নদীর পুণ্ডুরিয়া, দত্তপাড়া ও তালপট্টিতে একটি করে এবং শামুকজানি ও বড়গ্রামে দুটি করে—মোট সাতটি বাঁশের বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। এসব বাঁশের বেড়ার সঙ্গে সুতি জাল লাগিয়ে পোনা থেকে শরু করে ছোট-বড় সব মাছ ছেঁকে তোলা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাগেশ্বরী নদীটিকে পাবনা সেচ প্রকল্পের প্রধান নিষ্কাশন খাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। উপজেলার ১০-১২টি বিলের বর্ষার পানি এর মাধ্যমেই নিষ্কাশিত হয়ে থাকে। সুতি জালের ঘেরগুলো বাঁশ, চাটাই ও পলিথিন দিয়ে নদীর এপার-ওপার বিস্তৃত করে নির্মাণ করা হয় বলে পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়। এতে বিলে চাষ করা আমন ধান পাকলেও জমিতে পানি থাকায় কৃষকদের ধান কাটতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিল এলাকার ছয়-সাতজন কৃষক অভিযোগ করেন, সুতি জালের ঘেরের জন্য এমন ভোগান্তি প্রতিবছরের চিত্র। এবার বিলের ধান এখনো পুরোপুরি পাকেনি। সুতি জালের ঘেরগুলোর কারণে পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এবারও সময়মতো ধান কাটায় বিড়ম্বনার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

পুণ্ডুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কাগেশ্বরী নদীতে এপার-ওপার বিস্তৃত বাঁশ, পলিথিন, চাটাই ও সূক্ষ্ম জালের সাহায্যে সুতি জালের ঘের বানানো হয়েছে। পানি প্রবাহের জন্য মাত্র কয়েক ফুট জায়গা রাখায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানিনিষ্কাশন।

ঘেরের মালিক আলমাস আলী বলেন, এ ঘেরটিসহ দত্তপাড়ায় তাঁর আরও একটি ঘের আছে। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায়। দুই ঘেরে যা মাছ পাওয়া যায়, এর দশ আনা তাঁর এবং বাকি ছয় আনা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরাসহ একটি মৎস্যজীবী সমিতিকে দিতে হয়। তিনি দাবি করেন, স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির লোকজন নদীর বিভিন্ন অংশ ইজারা নিয়েছেন। আর মৎস্যজীবী সমিতির সেই লোকজনের হয়েই তিনি মাছ ধরছেন।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, নদ-নদী, খাল-বিলে মাছ চলাচলের পথে এভাবে আড়াআড়ি বাঁধ বা স্থায়ীভাবে বেড়া দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ছাড়া সুতি জাল, কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরাও দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিধি লঙ্ঘন করলে এক থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডই হতে পারে।   

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান সরকার বলেন, ‘প্রাকৃতিক জলাশয়ে অবমুক্ত করা পোনাগুলো সুতি জালের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত বছরও আমরা কাগেশ্বরী নদীর কয়েকটি স্থান থেকে সুতি জালের ঘের উচ্ছেদ করেছি। এ বছর সুতি জালের ঘের বসানোর খবরটি জানা ছিল না। দ্রুত এগুলো উচ্ছেদের উদ্যোগ নেব।’

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ঘুঘুদহ এলাকা থেকে সুতি জাল উচ্ছেদ করেছি। আবার যে সুতি জাল স্থাপন করা হয়েছে, সে বিষয়টি জানা ছিল না। অতি দ্রুত এগুলো উচ্ছেদ করা হবে।’