উচ্চশিক্ষায় ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ

.
.

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো বলছে, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে জাতীয় উন্নয়ন এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করেছে বেশ কিছু দেশ। এদের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ দেশে শিক্ষার মান বেড়েছে। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়েন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের এই হার এশিয়ার সর্বোচ্চ দেশের তালিকায় আছে।
ইউনেসকোর বৈশ্বিক বিজ্ঞান প্রতিবেদন ২০১৫-এ এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে দেশে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য ১৮ লাখ ৪০ হার শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। ২০০৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৫০ হাজার। এই সময়ে প্রকৌশলে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৮ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউনেসকো বলছে, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তির হার বেশি হলেও খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী পিএইচডি ডিগ্রির (গবেষণা) জন্য ভর্তি হন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম প্রকৌশলীরা। ২০০৯ সালে ১৭৮ জন প্রকৌশলী পিএইচডি ডিগ্রির জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। ২০১২ সালে ভর্তির সংখ্যা বেড়ে হয় ৫২১। প্রতিবেদেন বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৭ হাজার ৯০ জন পিএইচডি ডিগ্রিধারী আছেন। অন্যদিকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীর সংখ্যা ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৬৫৯ জন।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর বিশেষ জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ ২০১২ সাল নাগাদ মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. কায়কোবাদ ইউনেসকোর প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা জমি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় খুবই কম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা ছাড়া, এই খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে না।
‘ইউনেসকো সায়েন্স রিপোর্ট: টুয়ার্ডস ২০৩০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক দেশ জাতীয় উন্নয়ন এজেন্ডায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে যুক্ত করেছে। ২০০৮-০৯ সালের অর্থনৈতিক সংকটের পরও গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। প্রতিবেদনে কিছু বৈশ্বিক প্রবণতার কথা বলা হয়েছে। দেখা গেছে, ফলিতবিজ্ঞানে বিনিয়োগ বেশি হচ্ছে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে বিজ্ঞান ও গবেষণা খাতে সরকারি ব্যয় কমে গেছে। এই খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ আগের মতো আছে বা বেড়েছে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে সরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে উত্তর-দক্ষিণের ব্যবধান কমেছে। তৃতীয়ত, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন পৃথিবীতে বিজ্ঞানীর সংখ্যা বেশি এবং তাঁরা এক জায়গায় স্থির নন। ২০০৭ সালের চেয়ে ২০১৪ সালে গবেষক ও বৈজ্ঞানিক প্রকাশনার সংখ্যা ২০ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের শিক্ষার মান বেড়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, ২০১০ সালে মাধ্যমিক স্তরে শ্রেণিকক্ষে গড়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭২। ২০১৩ সালে কমে ৪৪ জনে দাঁড়ায়। প্রাথমিক স্তরে পুনর্ভর্তির হার ১৩ থেকে কমে ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধিবিষয়ক প্রকল্পের (২০০৯-২০১৮) মধ্যবর্তী মূল্যায়নে দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষার মানে সন্তোষজনক অগ্রগতি হচ্ছে।
অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেন, এ দেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম, মোট জাতীয় আয়ের মাত্র ২ শতাংশ। বরাদ্দ বাড়ানো গেলে শিক্ষার পরিস্থিতি আরও ভালো হতো।
ইউনেসকোর ৮২০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে অন্যান্য বেশ কিছু দেশের মতো বাংলাদেশ বিষয়ে পৃথকভাবে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, কৃষিপ্রযুক্তি বাংলাদেশে উৎপাদনশীলতা ত্বরান্বিত করেছে। ৪৭টি নতুন প্রযুক্তি ১৩ লাখ ১০ হাজার কৃষক ব্যবহার করছেন, ২০০টি ফলিত গবেষণায় অর্থায়ন করা হচ্ছে, কৃষিতে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ১০৮ জন নারী ও পুরুষ বিজ্ঞানীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে, কৃষকদের জন্য ৭৩২টি তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র খোলা হয়েছে, শস্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার ৩৪টি প্রযুক্তি ১৬ হাজার কৃষক ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছেন।
২০০৫ সালে বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা ছিল ২৮৩টি। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯৪-এ। ইউনেসকো বলছে, বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লেখার সময় বাংলাদেশি বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সহপ্রবন্ধকার হিসেবে সঙ্গে রাখছেন। অন্যদিকে দেশে অবস্থানরত বিজ্ঞানী বা গবেষকদের চেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মেধাস্বত্বের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী।
প্রতিবেদনে ইউনেসকোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা বলেছেন, ২০১৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো টেকসই উন্নয়নের চালক হিসেবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে স্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।