কাজুহিরো ওয়াতানাবে: অনন্য বাংলাপ্রেমী

সারা বিশ্বে হাতে গোনা যে কয়জন বিদেশি নিষ্ঠার সঙ্গে বাংলা ভাষা চর্চায় নিয়োজিত আছেন, জাপানি নাগরিক কাজুহিরো ওয়াতানাবে তাঁদের একজন। একজন না বলে তাঁকে তাঁদের নেতৃস্থানীয় বললে বরং বেশি যুক্তিসংগত শোনাবে। কেননা, তিনি যে কেবল বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভালোবেসে বিদেশে আমাদের এই ভাষার বার্তা পৌঁছে দেওয়ায় নিয়োজিত আছেন, তা-ই নয়; তিনি হচ্ছেন সেই বিলুপ্তপ্রায় বিদেশিদের একজন, যিনি বাংলা ভাষায় লেখালেখির মধ্য দিয়ে বঙ্গভাষীদের কাছে নিজের দেশের অজানা অনেক তথ্য তুলে ধরার কাজেও নিয়মিত নিজেকে জড়িত রাখছেন। সেদিক থেকে তিনি হচ্ছেন সত্যিকার অর্থেই অনন্য এক বাংলাপ্রেমিক।

কাজুহিরো ওয়াতানাবের অমূল্য সংস্পর্শ আমি ভোগ করে চলেছি দুই দশক ধরে। রেডিও জাপানের বাংলা বিভাগেই আমরা কেবল সহকর্মীই নই; জাপানের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় দশক ধরে আমি শিক্ষকতায় নিয়োজিত, এপ্রিল ২০১২ থেকে সেখানে বাংলা ভাষা ও বাংলার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কোর্স চালু হওয়ার পর তিনি শিক্ষকতা শুরু করায় আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়েরও সহকর্মী।

ঘনিষ্ঠতার সূত্রে কাজুহিরো ওয়াতানাবেকে বাংলায় লেখালেখি শুরু করতে প্ররোচিত করার কিছুটা কৃতিত্ব বোধ হয় আমি দাবি করতে পারি। বছর কয়েক আগে প্রথম আলোর ঈদসংখ্যা থেকে এর সূত্রপাত। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ভ্রমণ করে যাওয়া জাপানি এক সাংবাদিকের দীর্ঘ রচনা বাংলায় অনুবাদ করার অনুরোধ নিয়ে তাঁর কাছে আমি ধরনা দিয়েছিলাম। আমার সেই ফাঁদে তিনি আটকা পড়ে যান। এর পরিণতি হিসেবে বাংলাদেশের পাঠকেরা ইতিমধ্যে পেয়ে গেছেন চমৎকার কয়েকটি উপহার। বাংলাদেশ নিয়ে জাপানিদের লেখা দুটি অসাধারণ বইয়ের পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদ তিনি শেষ করেছেন। তাকেশি হায়াকাওয়ার আমার বাংলাদেশ ও তাদামাসা হুকিউরার রক্ত ও কাদা ১৯৭১ প্রথমা প্রকাশন বের করেছে। উৎসাহী পাঠকদের মধ্যে বই দুটি যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছে। এর ফলে আমাদের প্রত্যাশাও এখন তাই অনেক ঊর্ধ্বমুখী। আমরা অপেক্ষায় আছি, ভবিষ্যতে তিনি পাঠকদের আর কী উপহার দেন, তা দেখার জন্য।

বাংলা ভাষার প্রতি কাজুহিরো ওয়াতানাবের ভালোবাসার উন্মেষ কখন কীভাবে হয়েয়েছিল, তার এক চমৎকার বর্ণনা উঠে এসেছে তাঁর এই স্মৃতিচারণামূলক রচনায়। এখানেও আমরা দেখছি, দূর প্রবাসের ভিনদেশি এক বঙ্গপ্রেমিককে, ভালোবাসার চোখ নিয়ে বাংলার দিকে দৃষ্টিপাত করা থেকে যাঁর মনে প্রায় চার দশক আগে অঙ্কুরিত হয়েছিল গভীর এক আগ্রহ। সে আগ্রহ ও অনুভূতি আজও অম্লান।

মনজুরুল হক: শিক্ষক; সাংবাদিক