ঋণ না নিয়েও ঋণখেলাপি!

সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়েও ঋণখেলাপির তালিকায় পড়েছেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার ১১ জন কৃষক। তাঁদের নামে ঋণের টাকা তোলা হলেও এ ব্যাপারে তাঁরা কিছুই জানেন না।
২০১১ সালে আলফাডাঙ্গা সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক কাজী আবদুল আলীম, মাঠ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান উপজেলার ওই ১১ জনের নামে ঋণ দেখিয়ে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলার বানা ইউনিয়নের বেলোবানা গ্রামের ১১ জন দরিদ্র কৃষক গত এক মাসে ব্যাংক থেকে ঋণখেলাপি হওয়ার চিঠি পান। এ বিষয়ে তাঁরা অবৈধভাবে ঋণের নামে টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমডি) লিখিতভাবে জানান। এ ছাড়া ব্যাংকের ফরিদপুর শাখার মহাব্যবস্থাপক (জিএম), দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক ও ব্যাংকের আলফাডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপককে লিখিত অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ব্যাংকের মাঠ কর্মকর্তা নজরুল ও মিজানুর তাঁদের ঋণ দেওয়ার কথা বলে তিন কপি করে ছবি নেন। তিন দিন পর তাঁরা ব্যাংকে গেলে বেশ কয়েকটি কাগজে সই নেওয়া হয়। সাত দিন পর ব্যাংক থেকে ঋণ পাস হয়নি বলে তাঁদের জানানো হয়। কিন্তু সম্প্রতি ব্যাংক থেকে খেলাপি ঋণগ্রহীতা মর্মে তাঁদের নামে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, কাজী আবদুল আলীম ও ওই দুই মাঠ প্রতিনিধি দরিদ্র ব্যক্তিদের ঋণ দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
আলফাডাঙ্গা সোনালী ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১১ সালে ক্ষুদ্র খামার, ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং জাগো নারী—এ তিনটি প্রকল্পের আওতায় ১৪৭ জন কৃষককে মোট ২৫ লাখ দুই হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। বানা ইউনিয়নের আবু শেখের (৪৫) নামে ক্ষুদ্র ব্যবসায় ১৫ হাজার টাকা ঋণ দেখিয়ে সুদসহ ২২ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধের জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আবু শেখ বলেন, ‘নজরুল ও মিজানুর আমাকে সাত দিন ঘুরিয়েও লোন দেননি। চিঠিতে আমার নামে ১৫ হাজার টাকা লোন উত্তোলনের বিষয়টি জানতে পাই। বর্তমানে তা সুদে-আসলে ২২ হাজার ৫০০ টাকা হয়েছে।’
একই গ্রামের মোসলেম বিশ্বাস বলেন, ‘আমাকে লোন দেবে বলে কাগজে সই নিয়েও লোন দেয়নি। এখন ঋণ পরিশোধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’ ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে ঋণ পরিশোধের চিঠি পেয়েছেন একই গ্রামের গাজিয়ার শেখ (৩৮), লিপি বেগম (৩৫), আফজাল বিশ্বাস (৪০), লাইলি বেগম (৩৫), রিয়াজ বিশ্বাস (২২), ইসলাম মোল্লা (২৫), মনজুয়ারা বেগম (৩০), হাজেরা বেগম (৩৫), গোলজান বেগমসহ (২৪) আরও অনেকে।
স্থানীয় আশরাফুল ইসলাম বলেন, সদর, বানা, বুরাইচ ইউনিয়নে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে পাঠানো এমন ৫০টি চিঠির কথা তিনি জানতে পেরেছেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাঠ প্রতিনিধি মিজানুর রহমান গ্রামে গ্রামে ঘুরে গ্রুপ তৈরি করে ছবি তুলেছেন, ঋণ ইস্যু করেছেন। তবে আমি তৎকালীন ব্যবস্থাপকের নির্দেশে কয়েকটি ঋণপত্রে সই করেছি।’ বর্তমানে বোয়ালমারীতে কর্মরত মাঠ প্রতিনিধি মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঋণ প্রদান নিয়ে কাজী আবদুল আলীম স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে অনিয়ম করেছেন। আমি এসব কাজ করতে চাইনি। কিন্তু তিনি আমাকে চাপ দিয়ে করতে বাধ্য করেছেন।’ কাজী আবদুল আলীম বর্তমানে শরীয়তপুরে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় কম্পিউটার ইনচার্জ পদে কর্মরত আছেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ব্যাংকের ঋণ মাঠপর্যায়ের প্রতিনিধিরা নির্ধারণ করে থাকেন। অনিয়ম কিছু হলে তাঁরা করেছেন।
আলফাডাঙ্গা সোনালী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপক বজলুর রহমান বলেন, ‘আমি ১১ ব্যক্তির অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি। আবেদনকারীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।’