সাইবার সহিংসতার শিকার ৭৪% নারী অভিযোগ করেন না

‘নারী নির্যাতনে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার: প্রতিকারের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে রাখছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন৷
‘নারী নির্যাতনে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার: প্রতিকারের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে রাখছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন৷

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, সাইবার সহিংসতার শিকার নারীদের ৭৪ ভাগই সামাজিকতার ভয়ে এ নিয়ে কোনো অভিযোগ করেন না। সহিংসতার শিকার মাত্র ২৬ শতাংশ নারী অভিযোগ করেন।
আজ মঙ্গলবার ‘নারী নির্যাতনে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার: প্রতিকারের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বরা সাইবার সহিংসতার মারাত্মক হুমকির মধ্যে আছে। গ্রামাঞ্চলের নারীরাও এ ধরনের সহিংসতার হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। আগামী দুই তিন বছরের মধ্যেই এ সহিংসতা `গ্লোবাল থ্রেট' হিসেবে ব্যাপক হারে দেখা দেবে।
প্রথম আলো ও ব্র্যাক যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
তারানা হালিম বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), র‍্যাব, পুলিশ, সিআইডিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সাইবার অপরাধ নিয়ে নিজের মতো করে কাজ করছে। কাজগুলো সমন্বিতভাবে হতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে নারী-পুরুষ সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
বিটিআরসির চলতি বছরের এক পরিসংখ্যান উল্লেখ করে তারানা হালিম বলেন, বিটিআরসিতে ২২০টি অভিযোগের মধ্যে ৬০ শতাংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সংক্রান্ত। কিছু অভিযোগ ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমলে নিলেও বেশ কিছু অভিযোগ ‘আপত্তি জনক নয়’ বলে আমলে নিচ্ছে না। কিন্তু দেশীয় প্রেক্ষাপটে অবশ্যই সেসব অভিযোগ আপত্তিজনক। তিনি বলেন, শিগগিরই সরকার ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করবে। এ ছাড়া সরকার ইন্টারনেট নিরাপত্তার জন্য বিশেষ প্রযুক্তি বা সফটওয়্যার আনা হচ্ছে। তবে যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, সমস্যা সমাধানে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন তিনি।

‘নারী নির্যাতনে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার: প্রতিকারের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
‘নারী নির্যাতনে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার: প্রতিকারের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো কার্যালয়ে গোলটেবিলের আয়োজন করা হয়। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব মাহবুবা পান্না সচেতনতা তৈরির বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, মেয়েরা ফেসবুক বা ই-মেইলের পাসওয়ার্ড ছেলে বন্ধুকে দিয়ে দিচ্ছে। মেয়েদের বুঝতে হবে পাসওয়ার্ড হচ্ছে মেয়েদের ব্যক্তিগত পোশাকের মতো, যা বাইরে প্রকাশ করতে নেই। এ ছাড়া কোনো একটি ঘটনা ঘটে গেলে অনেক মেয়ে আত্মহত্যা করছে। মেয়েদের মনে রাখতে হবে এ ধরনের ঘটনা যেকোনো দুর্ঘটনার মতোই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, অপরাধীদের ধরার পর অনেক সময় অমুক বা তমুক ভাইয়ের ভাগনা বা অন্য পরিচয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুরাইয়া পারভীন জানালেন, সাইবার অপরাধের পেছনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিভাবকের দোষ থাকে। আধুনিক প্রযুক্তি হঠাৎ করে তরুণ প্রজন্মের হাতে চলে এসেছে। অথচ এখন পর্যন্ত অভিভাবকেরা এ প্রযুক্তি সম্পর্কে তেমন একটা জানেন না। ফলে তাঁরা ছেলে মেয়েকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। এ ছাড়া সাইবার অপরাধ দমনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি ‘বোধের জায়গায়’ পরিবর্তন আনতে হবে।
উপপুলিশ কমিশনার (উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সাইবার হয়রানির শিকার কোনো নারী সহায়তা চাইতে এলে গোপনীয়তার বজায় রেখে ওই নারীকে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হয়। নারী পুলিশের সঙ্গে পাঠিয়ে থানায় মামলা দায়েরসহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হয়। তিনি অপরাধের শিকার নারীদের পরিবারসহ সবাইকে মানসিকভাবে সহায়তা করার আহ্বান জানান।