চৌকি দিয়ে দিনে ফুটপাত, রাতে ডিভাইডার দখল

সোমবার রাত সাড়ে নয়টা। মতিঝিল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সামনে প্রধান সড়কের বিভাজনের (ডিভাইডার) ওপর ইস্পাতের বেড়ায় আড়াআড়িভাবে চৌকি বাঁধছিলেন সোলায়মান ও তাঁর সঙ্গী। পাশের ফুটপাতে ওই চৌকিতেই কাপড়ের ব্যবসা করেন তাঁরা।
এখানে চৌকি বাঁধছেন কেন—জানতে চাইলে সোলায়মান হাসলেন, ‘ফুটপাতে ফালাইয়া রাখতে কন? রাস্তার মধ্যখানের এই জায়গাই নিরাপদ।’
দেখা গেল, সোলায়মানের মতো আরও অনেকেই ইস্পাতের বেড়ায় (রেলিং) চৌকি বেঁধেছেন এবং বাঁধছেন। বাঁধার আগে চৌকি পেতে রাখছেন রাস্তার ওপর। দ্রুতবেগে আসা বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ক্ষণিকের জন্য থমকে যাচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সোলায়মান বললেন, ‘কিস্সু অইব না, বহুত দিনের অভ্যাস।’ গত মঙ্গলবার সকাল সাতটা নাগাদ মতিঝিলের একই স্থানে গিয়ে দেখা গেল, অন্তত ৫০টি চৌকি বাঁধা। বেশির ভাগ নতুন কাঠের। এর অর্থ পুরোনো হকারদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন হকাররা। এ ছাড়াও ফুটপাতের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোয় শিকলবাঁধা শতাধিক চৌকি। পাহারায় কেউ নেই। একজন ঝাড়ুদার বললেন, রাতে বেঁধে রেখে সকাল নয়টা নাগাদ চৌকিগুলো খুলে ফুটপাতে পাতা হয়। দুপুর ১২টার দিকে দেখা গেল, কোথাও কোনো চৌকি বাঁধা নেই। সেগুলো ফুটপাতে পেতে জামাকাপড় ও অন্য সামগ্রী রাখা হয়েছে। সেখানে অনেক হকারের মধ্যে মিশে আছেন সোলায়মান।
গত জুলাইয়ের পর মতিঝিল এলাকায় ফুটপাত দখলমুক্ত করার কোনো অভিযান হয়নি। ফলে রাজধানীর অন্য এলাকার তুলনায় মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার যানজট আরও বেড়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ইত্তেফাক মোড় থেকে শাপলা চত্বর হয়ে দৈনিক বাংলার মোড়, বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন এলাকায় ব্যাপক যানজট দেখা যায়। পুরো এলাকায় সড়কের দুই পাশের ফুটপাত, এমনকি রাস্তার অংশেও বসেছে হকার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ বলেন, ফুটপাত হকারমুক্ত করলেও ধারাবাহিকতার অভাবে আবারও দখল হয়ে যায়। তবে শিগগিরই মাসব্যাপী অভিযানের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। ফুটপাতের সঙ্গে এবার নতুন যুক্ত হবে ডিভাইডার মুক্ত করার অভিযান। এ কাজে র্যাবকে যুক্ত করার কথাও ভাবা হচ্ছে।