নতুন ভবন ঠিকাদারের দখলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান

ভোলার লালমোহন উপজেলার পূর্ব-চতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন দখল করে বসবাস করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠিকাদারের লোকজন। আর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে পাশের ভবনে পাঠদান করানো হচ্ছে।
গত সোমবার (১৬ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, পাউবোর কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেভি ট্রেডার্সের লোকজন বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ওপরতলা দখল করে বসবাস করছেন এবং নিচতলায় গুদাম করে মালামাল রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে পাশের জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ একতলা ভবনে। জরাজীর্ণ ওই ভবনটির দরজা-জানালা ভাঙা। মেঝেতে বেশ কয়েকটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি পাউবোর বাঁধের ব্লক নির্মাণের কাজে নিয়োজিত।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জাফর, একাধিক ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবক বলেন, ছাত্ররা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে, কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটলে কে দায়ভার নেবে? ছাত্রছাত্রীরা এখন শৌচাগার ব্যবহার করতে পারছে না। ঠিকাদার ইচ্ছে করলে প্রকল্প এলাকায় বেড়িবাঁধের পাশে ঘর তুলে বসবাস ও গুদাম বানাতে পারেন; তা না করে বিদ্যালয় ভবন দখল করেছেন। তাঁরা দ্রুত নতুন ভবন বিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানান।
পূর্ব-চতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৫৪ জন ছাত্রছাত্রী। ১৯৯২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ’৯৫-৯৬ সালে বিদ্যালয়ের জন্য একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হলে ২০১০ সালে একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। নতুন ভবনটি নির্মাণ করা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তা বুঝে পাইনি। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ওই নতুন ভবনে পুলিশ অস্থায়ী ক্যাম্প বসায়। গত জানুয়ারিতে পুলিশক্যাম্প সরিয়ে পাশের মঙ্গল সিকদার বাজারে নেওয়া হয়। এরপর ভবনটি আবার দখল করেন পাউবোর ডিভিশন-২-এর ঠিকাদার। অনেক অনুরোধের পর দ্বিতীয় তলায় পাঠাগারের জন্য আমাদের একটি কক্ষ ছেড়ে দিয়েছেন ঠিকাদার। এখন ভবনের অভাবে দুই বছর ধরে তাঁদের জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস নিতে হচ্ছে। স্থানীয় ধলীগৌরনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হেদায়াতুল ইসলাম পাউবোর ঠিকাদারের লোকজনকে বিদ্যালয়ের ওই নতুন ভবনে থাকতে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে পাউবোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেভি ট্রেডার্সের সুপারভাইজর বেলাল হোসেন মিয়া বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যালয় ভবনে থাকতে দিয়েছেন। তাই থাকছি। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চলে যাব। কবে নাগাদ প্রকল্প শেষ হবে, জানতে চাইলে বেলাল বলেন, এখনো ছয় মাস লাগবে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ঘটনাটি সত্য হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারের লোকজনের থাকার জায়গা না থাকায় সেখানে থাকতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয় ভবনে তাঁদের কেন থাকতে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক দিন শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে ক্লাস করুক। কয়েক দিন পরই তো ঠিকাদারের লোকজন চলে যাবে।