অভিবাসন-প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ

অবৈধভাবে প্রবেশের অপরাধে আটক প্রায় ১৫০ বহিরাগত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কারাগারে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের অনেকেই বাংলাদেশের। গতকাল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে তাঁদের মুক্তির দাবিতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন শতাধিক অভিবাসী। হিলারির কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

দেশিস রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং (ড্রাম) নামের নাগরিক অধিকার সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ওই বিক্ষোভে বাংলাদেশি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকজন বাংলাদেশি ও তাঁদের স্বজনেরা সেখানে ছিলেন।

ড্রামের পক্ষ থেকে ফাহদ আহমেদ বলেন, যেসব বাংলাদেশি এখনো অনশন করছেন, তাঁরা সবাই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু তাঁদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এর পরও তাঁরা দেশে ফিরে যেতে রাজি হননি। এ কারণে তাঁরা কারাগারে রয়েছেন। কোনো কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত আটকে রয়েছেন। মুক্তির অন্য কোনো পথ না পেয়ে তাঁরা এখন অনশন শুরু করেছেন। তাঁদের কারও প্রতি দুর্ব্যবহার করা হয়েছে, এমনকি জোর করে খাওয়ানোরও চেষ্টা হয়েছে।

টেক্সাসের এল পাসো ডিটেনশন সেন্টার থেকে মুক্ত হয়ে এসেছেন এমন কয়েকজন বাংলাদেশি সাংবাদিকদের কাছে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে অব্যাহত সহিংসতা ও রাজনৈতিক অশান্তির মুখে তাঁরা দেশ ছেড়ে এ দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। তাঁদের আবেদনের পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও আদালত তাঁদের বহিষ্কারাদেশ দেন। অনশনের পর শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁরা সবাই এখন রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য নতুন করে আইনি লড়াই শুরু করেছেন।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য শোনেন হিলারির নির্বাচনী কার্যালয়ের প্রতিনিধি লরেলা প্রায়েলি। তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটন অবৈধ অভিবাসন সমস্যার একটি মানবিক ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পক্ষে। তিনি বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য হিলারির কাছে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন। 

বিক্ষোভ শেষে এল পাসো থেকে মুক্তি পেয়ে নিউইয়র্কে এসেছেন এমন একাধিক বাংলাদেশি কিশোর ও যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানবপাচার চক্রের সাহায্য নিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার চেষ্টা করে। সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে আসা জাহেদ আহমেদ বলেন, দক্ষিণ আমেরিকার ১৭টি দেশ পাড়ি দিয়ে অবশেষে মেক্সিকো-আমেরিকা সীমান্ত দিয়ে তিনি এল পাসোতে প্রবেশ করেন। এ জন্য তাঁকে ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ডলার। এত টাকা খরচ করে তিনি কেন এসেছেন জানতে চাইলে বলেন, আর্থিক অবস্থার উন্নতির আশায় বাবা দালালের মাধ্যমে তাঁকে বিদেশে পাঠিয়েছেন।

সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে তিনি মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। এই পথে তাঁকে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। এল পাসোতে আটকা থাকার সময় তাঁর ওপর নির্যাতন চলেছে। অনশনের পর বহিষ্কারাদেশ নিয়ে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয় পাবেন সে নিশ্চয়তা নেই।

ড্রামের প্রধান নির্বাহী ফাহদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিকূল অবস্থার ভেতর দিয়ে এসব অভিবাসীদের যেতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে অভিবাসনের বিপক্ষে জোরালো মনোভাব গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও অবৈধ অভিবাসীদের বৈষম্য ও সামাজিক তিরস্কারের মুখে পড়তে হচ্ছে। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই ডেমোক্রেটিক প্রার্থী, হিলারি ক্লিনটন ও বার্নি স্যান্ডার্স অভিবাসন সমস্যা সমাধানের পক্ষে তাঁদের মতামত দিয়েছেন। তিনি আশা করেন, অনশনরত অভিবাসীদের অধিকারের প্রশ্নটি এই দুই প্রার্থী মনে রাখবেন ও মূলধারায় তা উপস্থিত করবেন।