পোশাকশ্রমিকদের অবরোধ, ভাঙচুর

রাজধানীর কমলাপুর-সংলগ্ন মুগদায় বাস ভাঙচুরের সময় আহত এক নারী যাত্রী আতঙ্কিত শিশুকে কোলে নিয়ে যানটি থেকে নামছেন। ছবিটি গতকাল সকালে তোলা l সাজিদ হোসেন
রাজধানীর কমলাপুর-সংলগ্ন মুগদায় বাস ভাঙচুরের সময় আহত এক নারী যাত্রী আতঙ্কিত শিশুকে কোলে নিয়ে যানটি থেকে নামছেন। ছবিটি গতকাল সকালে তোলা l সাজিদ হোসেন

বাসচাপায় নিহত আকলিমা আক্তার (৩০) নামে এক নারী শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে রাজধানীর কমলাপুরে সড়ক অবরোধ করেছেন পোশাকশ্রমিকেরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা কমলাপুর রেলস্টেশন-সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। এতে মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
গত শুক্রবার রাতে কমলাপুরে বাসস্ট্যান্ডের কাছে বলাকা পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় আকলিমা ঘটনাস্থলে মারা যান। তাঁর সহকর্মী রহিমা বলেন, কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফেরার সময় বাসের ধাক্কায় নিহত হন আকলিমা। তিনি কমলাপুরের অলিও অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। এ ঘটনায় একই কারখানার শ্রমিক হাজেরা (৩২) ও ভ্যানচালক জসিম (৩০) নামে আরও দুজন আহত হন। আশপাশের লোকজন বলাকা পরিবহনের চালক আরিফকে বাসটিসহ আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর গতকাল সকাল নয়টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে নটর ডেম কলেজের মোড় পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করেন পোশাকশ্রমিকেরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আশপাশের ছয়-সাতটি পোশাক কারখানার হাজার খানেক শ্রমিক সড়কটিতে জড়ো হন। তাঁরা লাঠি নিয়ে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। টায়ার জ্বালিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এ সময় বাসচাপায় নিহত শ্রমিকের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ, বাসচালকের বিচার এবং দুর্ঘটনাস্থলে পদচারীসেতু স্থাপনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন শ্রমিকেরা। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেন। টানা কয়েক ঘণ্টা অবরোধে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় কমলাপুর, মুগদাপাড়া, আরামবাগ, ফকিরাপুলসহ কয়েকটি এলাকার সড়কগুলোতে যানজট ছড়িয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঘটনাস্থলের আশপাশে ব্যারিকেড দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ। পরে ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত সচিব মনসুর খালেদ, অলিও অ্যাপারেলস লিমিটেডের কর্মকর্তা কাজী তসলিম উদ্দিন ও পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন।
নিহত আকলিমার পরিবারকে দুই লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার খরচ, চিকিৎসাকালীন ছুটি ও অন্যান্য ভাতা দেওয়ার আশ্বাস দেন কাজী তসলিম উদ্দিন। এ ছাড়া আকলিমার লাশ দাফনের জন্য ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেয় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। এরপর বেলা পৌনে দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকেরা।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, বাসচাপায় নিহত নারী শ্রমিক ও আহত দুজনকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছে পোশাক কারখানার মালিকপক্ষ। এ ছাড়া পদচারীসেতু স্থাপনের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করা হবে।