আখাউড়ায় একাধিক 'বিদ্রোহী' নিয়ে ছন্নছাড়া বিএনপি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির একাধিক ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা, ওয়ার্ড ও পৌর বিএনপির কিছু নেতা-কর্মীর আওয়ামী লীগে যোগদান, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া—সব মিলিয়ে ছন্নছাড়া অবস্থা দলটির।
উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী সূত্রে জানা গেছে, মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মন্তাজ মিয়া ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আবেদন করেন। কেন্দ্র থেকে মন্তাজকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু জয়নাল ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এমনকি সদ্য পদত্যাগকারী ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মশিউর রহমানও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। ওই দুজন জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলটির উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা জোর তৎপরতা চালিয়েও এখন পর্যন্ত ওই দুই প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য রাজি করাতে পারেননি। এদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, পৌর বিএনপির সভাপতি ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাহার মিয়া, পৌর বিএনপির সহসভাপতি দেওয়ান সাজেদুল হক, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান নওয়াব মিয়া, উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি রাকিবুল ইসলাম, উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি লুৎফুর রহমানসহ বিএনপির আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী তাকজিল খলিফার সভায় উপস্থিত হচ্ছেন। এসব সভায় তাঁরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্যও দিচ্ছেন।
এদিকে মাস দুয়েক আগে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমীন খাদেম ঢাকায় আইনমন্ত্রীর হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ৭ ডিসেম্বর পৌর বিএনপির সহসভাপতি খুরশেদ খাদেম দল থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এ ছাড়া সম্প্রতি পৌর বিএনপির সহসভাপতি মানিক মিয়া দল থেকে পদত্যাগ করেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করেছে। তাঁদের ভাষ্য, ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী জয়নাল আবেদীনকে মনোনয়ন দিলে বিএনপি অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকত। আওয়ামী লীগের প্রার্থীও তখন বেকায়দায় পড়তেন।
গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি একত্র হতে পারছে না। ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে। দল মনোনীত প্রার্থীর এলাকায় তেমন জনপ্রিয়তা নেই।
উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছি।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পৌর বিএনপির সহসভাপতি সাজেদুল হক জানান, বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণার তেমন হাঁকডাক নেই। দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। পৌর এলাকায় ৩০-৩৫ সদস্যের একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ গ্রাম উন্নয়ন কমিটি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র তাকজিলা খলিফা আইনমন্ত্রীর লোক। গ্রাম উন্নয়ন কমিটি ও এলাকার লোকজন দলমত-নির্বিশেষে উন্নয়নের জন্য তাঁর পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক বলেন, ‘এখনো তৎপরতা আরম্ভ হয়নি। দলের নেতা-কর্মীরা কেউ মাঠে নেই। বাড়িতে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে আছি।’
বিএনপির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল হক বলেন, ‘এটা স্থানীয় নির্বাচন। অনেক সময় চুপ থাকতে হয় বা গা বাঁচিয়ে চলতে হয়। বিএনপির দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নাচতে চাই। কিন্তু আমাদের তো নাচাতে হবে।’
মন্তাজ মিয়া বলেন, ‘এলাকার তৃণমূল লোকজন ও জেলাসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি আমাকে মনোনীত করেছে। জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। সব ঠিকমতো হলে এই আসন থেকে বিএনপি জয়ী হবে।’
জয়নাল আবেদীন বলেন, কেন্দ্র কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারাই ভালো বলতে পারবে। এটি তাঁর শেষ নির্বাচন জানিয়ে তিনি বলেন, দল বহিষ্কার করলেও তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না।